গত ১৮ নভেম্বর ছিল মরহুম কবি আহমদ বাসিরের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে মাত্র ৪২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাকে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন লেখক ও সংগঠক আফসার নিজাম।
অনেকেই ইন্তেকালের পর স্মৃতি হয়ে যায়। কিন্তু বাসির আমার কাছে স্মৃতি হয় না। মনে হয় বাসির এখনও ইন্তেকাল করেনি। আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন বাসিরও বেঁচে থাকবে। বাসিরকে নিয়ে অনেক স্মৃতি মনে করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো স্মৃতি মনে করতে পারছি না। এটা আমার ব্যার্থতা না কী ভালোবাসা বুঝতে পারছি না। বাসিরের ঢাকাবাসের সময় থেকে আমার সাথে, আমার পরিবারের সাথে যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা হয়তো অন্য কোনো পরিবারের সাথে হয়ে ওঠেনি। তাই আমরা ছিলাম ভাইয়ের মতো বন্ধু।
প্রথম পরিচয় কেমন করে হলো? এটা কোনো সাহিত্য অবস্থান থেকে নয়। একটা রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। আমরা দুজনেই একই ছাত্র রাজনীতি করতাম। একদিন আমার থানা সভাপতি (জিলানী ভাই) এসে বলল নোয়াখালির একটি ছেলে আমাদের এখানে আছে সেও কবিতা লিখে। আপনিও কবিতা লিখেন। আরো কয়েকজন আছে সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেবো। জিলানী ভাই আমাকে তার মোটরবাইকের পেছনে নিয়ে সোজা মিরপুর সাড়ে এগারো নাম্বার পল্লবী শপিং সেন্টারে চলে গেলো। সেখানেই পরিচয় হলো বাসির আহমেদের সাথে। পরিবর্তীতে কবি মতিউর রহমান মল্লিক ওর নাম করে দেন আহমদ বাসির। আহমেদ না করে কবি ফররুখ আহমদ এর আহমদ নিয়ে নামের পরিবর্তন করেন। তো পল্লবী শপিং সেন্টারে উপলা কসমেটিকসের শোরুমে গিয়ে দেখা হলো। উপলা ছিলো বাসিরের মামার। ওর মামা আমেরিকা থাকায় ওটা পরিচালনা করতো বাবলু ভাই (বাসিরের বড় ভাই)। বাসির তাকে সহযোগিতা করতো।
সেদিন বেশি কিছু কথা হয়নি। আমি পরিচয় হয়েই চলে আসলাম। এরপর প্রায় প্রতিদিনই আমাদের দেখা হতো। এর পর জিলানী ভাই বলল আরো একজন কবি আছে রূপনগরে সেখানে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেই। আমি রওয়ানা দিলাম সাড়ে এগারো থেকে বাসিরকেও তুলে নিলাম। তিনজন মিলে রেদওয়নের ব্যবসা পতিষ্ঠানে দেখা করলাম। রেদওয়ান তখন একটি জেনারেল স্টোর চালাত। পরিচয় হলো আরো একজন লেখকের সাথে। মিরপুরের লেখকের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। ও আরো একটু বলে নেই। মাহমুদ বিন হাফিজ নামে আরো একজন লেখক আমার সাথেই থাকতো। সেইও আমাদের ছাত্র রাজনীতি করতো। যদিও সে লেখক ছিলো না। আমার লেখালেখি দেখে সেও ক্রমাগত লেখক হওয়ার কসরত করতে থাকে এক সময় মাহমুদ বিন হাফিজ চমৎকার গল্প লেখক হয়ে ওঠে। তো আমরা একজন চারজন হয়ে গেলাম। আমাদের সংখ্যাটিও খুব স্মার্ট। চার। চার সংখ্যার একটি মরতবা আছে। প্রধান চার ফেরেস্তা। প্রধান চার খলিফা।
বাসির আমার থেকে এক বছরের ছোট। আমি মাহমুদের এক বছরের ছোট। রেদওয়ানও তাই। কিন্তু অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য আমরা সবাই বাসিরকেই লিডার হিসেবে মেনে নিয়েছি। আর তার অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য তাকে আমাদের মুখপত্র হিসেবে হাজির করতে থাকি।