১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৩২ এএম
কুদসে
মূল : মাহমুদ দারবিশ
আল কুদসে, তার প্রাচীন সীমানার ভেতর স্মৃতিহীন আমি
পরিভ্রমণ করি যুগ-যুগান্তর
আমার বুকে বন্দুক তাক করছো?
অথচ এখানে নবিগণ বিলি করতেন পবিত্রতার ইতিহাস
যাঁরা আকাশ থেকে ফিরেছিলেন বেদনা ও উপেক্ষা সঙ্গী করে
ভালোবাসা আর শান্তি, পবিত্র শব্দদুটির অভিমুখ এই শহরের দিকে;
ঢালু ভূমিতে হাঁটছি, আর আমার ত্রস্ত্র হৃদয় নিশ্চুপ বলছে—
তাওরাতে সুস্পষ্ট বাক্য থাকার পরও বর্ণনাকারীরা মতবিরোধ করল?
কেন মুখ ফসকে ‘অনুজ্জ্বল পাথরের’ বদলে ‘যুদ্ধ’ বলে দিল?
স্বপ্নালোক ভ্রমণ শেষে তীব্র বেগে চোখ খুলে দেখি
সামনে-পেছনে কেউ নেই, কিছু নেই
তাই এখন এই আলো সব আমার। যেখানে আমি হাঁটি আর হালকা হই
এবং উড়ি যে কোনো মুহূর্তে। তারপর প্রকাশ্যে পরিবর্তিত হয়ে যাই।
সদ্য ফোটা গুল্মের মতো ভবিষ্যদ্বাণী,
উদ্গত হয় নবির মুখ থেকে-‘যদি তোমরা ইমান না আন, তবে নিরাপত্তা পাবে না কখনো!’
আমি হাঁটি, যেন আমি ছাড়া অন্যজন, আমার ক্ষত যেন ফুটন্ত গোলাপ
শাদা বাইবেলের মতোন।
হাতগুলো যেন আমার নিষ্পাপ দুটি কবুতর
যারা ক্রুশের অনেক উপরে ওড়ে বহন করে ভূধর।
এখন আমি হাঁটি না, আকাশে উড়ি আর পরিবর্তিত হই।
আমার কোনো সময় নেই এবং নেই কোনো প্রান্তর।
তাহলে আমি কে? আমি ‘আমি না’ যেন অন্য কেউ।
তবে একাকী চিন্তা করি, আমার প্রিয় নবি বলতেন বিশুদ্ধ আরবি।
তারপর, তারপর কী হলো?
একজন সৈন্য চিৎকার দিল,
তুই কি আরেকজন? একটু আগে না তোকে গুলি করে মারলাম!
তাকে আমি বলি, আমাকেই মেরেছ তুমি… আমি সব ভুলে যাই,
ঠিক তোমার মতোন। যেন দেখা পাই আবার, শান্ত মৃত্যুর, জনম জনম।
কবি পরিচিতি: মাহমুদ দারবিশ
ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি এবং ‘ফিলিস্তিনের প্রেমিক’ নামে প্রসিদ্ধ। প্রতীকাশ্রয়ী আরবি কবিতার অন্যতম সৃজক তিনি। তার অসংখ্য কবিতা একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়ে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করেছে। ১৯৪২ সালে ফিলিস্তিনের গ্যালিলি প্রদেশের আল-বিরওয়াহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ইজরাইলি আক্রমণে মাত্র ছয় বছর বয়সে সপরিবারে গভীর রাতে লেবাননে রওয়ানা করেন। সেই থেকেই শুরু তার উদ্বাস্তু জীবন। আমৃত্যু কোথাও স্থির হতে পারেননি। কখনো মিশরে, কখনো বৈরুতে, কখনো প্যারিসে। আবার কখনো খোদ প্যালেস্টাইনে, নিজভূমে পরবাসী হয়ে।
দারবিশ একজন মানবতাবাদী কবি। তার কবিতার প্রতিটি বর্ণ স্বর্ণছোঁয়া। সৌন্দর্যে অবিনশ্বর। সৌকর্যে অনুপম। শৈল্পিক সুষমায় চিরন্তন। আবার একই সাথে তিনি প্রতিবাদী। তার অনেক কবিতা ফিলিস্তিনকে ঘিরে। ফিলিস্তিনের প্রকৃতি, প্রেম, সঙ্কট, প্রত্যাশা, ভবিষ্যৎ ইত্যাদিই তার কবিতার উপজীব্য। স্বাধীনতার জন্য জাগরণ, প্রয়োজনে বিদ্রোহ। জীবনের প্রয়োজনেই স্বাধীনতা, পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তি প্রভৃতির আহ্বান ছিল তার কবিতার অন্যতম সুর। ৯ আগস্ট ২০০৮ সালে আমেরিকার হেরমান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ওপেনহার্ট সার্জারির সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।