বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
, ১৯ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
শিরোনাম :
  • দেশীয়’র আয়োজনে লেখক-প্রকাশক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত দেশীয়’র আয়োজনে লেখক-প্রকাশক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য আয়োজনে পায়রা সাংস্কৃতিক সংসদের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন বর্ণাঢ্য আয়োজনে পায়রা সাংস্কৃতিক সংসদের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন
  • ৩য় কিস্তি

    যাকাত আপনার উপরও ফরয হয়েছে, ভেবে দেখেছেন কি?

    ড. খ ম আব্দুর রাজ্জাক

    ১৫ মে, ২০২৪ ০৯:৪৭ এএম

    যাকাত আপনার উপরও ফরয হয়েছে, ভেবে দেখেছেন কি?

    একুশ. বীমা পলিসির যাকাত:

    বীমা পলিসি দুই ধরনের হতে পারে। যথা: (ক) বাধ্যতামূলক (খ) সেচ্ছাধীন।

    বীমা পলিসি যদি বাধ্যতামূলকভাবে হয়, যেমন কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানে বা কারখানায় চাকরি করছে সেখানে তাকে চাকুর বিধি মোতাবেক ইন্সুরেন্স করতে হচ্ছে তাহলে সে যখন উক্ত টাকা ফেরত পাবে তখন মাত্র এক বছরের যাকাত পরিশোধ করবে। কিন্তু বীমা পলিসিটি যদি সেচ্ছাধীন হয় অর্থাৎ যে বীমা করতে ব্যাক্তি বাধ্য নয়, এমন বীমায় সঞ্চিত অর্থ প্রতি বছর যাকাতের আওতায় আসবে। কেননা এখানে ব্যক্তি নিজ ইচ্ছাতেই তার টাকা জমা রেখেছে তার নিজের সুবিধার জন্য। যদিও সে উক্ত টাকা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে উত্তোলন করতে পারবে না তবুও তাকে প্রতি বছর যাকাত দিতে হবে যদি সে সাহেবে নিসাব হয়। কিন্তু এরকম অনেক লোক আছেন যারা সেচ্ছায় বীমা করে থাকেন কিন্তু যাকাতের বেলায় তারা বীমায় সঞ্চিত উক্ত অর্থের যাকাত দেন না। তাদের যুক্তি টাকা তো আমাদের কব্জায় নেই, তাই যাকাত দেব কেন? তাদের এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তাদের উপর যাকাত ফরজই থেকে যাচ্ছে।

    বাইশ. কোম্পানীর রিজার্ভ ফান্ডের যাকাত:

    সাধারণত যে সকল শেয়ার হোল্ডারগণ অন্যান্য পণ্যের মতো লাভের আশায় শেয়ার বেচা-কেনা করেন তাদের যাকাত দেবার নীতি আর বার্ষিক ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) গ্রহণের উদ্দেশ্যে স্টক এক্সেঞ্জ থেকে শেয়ার ক্রয়কারীর যাকাত দেবার নীতি এক নয়। কেউ কেউ এ দুটোকে এক ভেবে শেয়ার মার্কেটের যাকাত নীতিমালাকে গুলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক কোম্পানী তাদের মূলধনের একটি নির্ধারিত পার্সেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকে রিজার্ভ ফান্ড হিসাবে সংরক্ষিত রাখে। এ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে। যে সকল শেয়ার হোল্ডার ডিভিডেন্ড এর উদ্দেশ্য শেয়ার ক্রয় করেন তারা কোম্পানীর যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবের সময় রিজার্ভ ফান্ডেরও হিসাব করবেন। এবং তার শেয়ারের আনুপাতিক হারে (অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদসহ) উক্ত রিজার্ভ ফান্ডেরও যাকাত আদায় করবেন। কেননা তার রক্ষিত শেয়ার তো সাধারণ পণ্যের মতো নয়। তিনি যদি রিজার্ভ ফান্ডে রক্ষিত টাকার যাকাত না দেন তাহলে গুনাহগার হতে হবে। বিষয়টি অনেকেই জানেন না।

    তেইশ. ব্যাংক গ্যারান্টি মানির যাকাত:

    বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসেবে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান ও গ্রহণের রেওয়াজ চালু আছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা একাউন্ট হোল্ডারের মালিকানাধীন থাকে তবে গ্যারান্টির মেয়াদকালে সে ঐ টাকা উত্তোলন করতে পারে না। এ কারণে অনেকেই ভেবে থাকেন যে এ টাকার যাকাত নেই। কারণ এ টাকা তো আমার আওতাধীন নয়। এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা অবশ্যই যাকাতযোগ্য। কেননা এ টাকা তো তারই। যতদিন এ টাকার ওপর একাউন্ট হোল্ডারের মালিকানা থাকবে ততদিন অন্যান্য টাকার মতই এ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে। ব্যাংক গ্যারান্টি মানিরও জাকাত দিতে হয়, এ বিষয়টি আমাদের সমাজের কজনই বা জানে?

    চব্বিশ. মেয়ের নামে রাখা গহনার যাকাত:

    মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি স্বরুপ আমাদের সমাজের অনেকেই মেয়ের নামে গহনা রেখে দেয়, কেউবা তাকে গহনা দিয়ে ব্যবহারের সুযোগও দেয়। এমতাবস্থায় সাধারণত মেয়ের কোনো আয়-রোজগার না থাকায় সে উক্ত গহনার যাকাত প্রদান করে না। মেয়ের বাবা-মাও ভেবে থাকেন যে গহনা তো মেয়েকে দিয়েছি, আমরা আবার যাকাত দেব কেন? দুপক্ষের এরুপ টানা পড়নে যাকাত অনাদায়ী থেকে যায়। যা মোটেও কাম্য নয়। মেয়ের নামে রাখা গহনার যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। অজানায় কিংবা কৌশলে যেভাবেই জাকাত বাদ দেয়া হোক না কেন এ ক্ষেত্রে ফরজ তো অনাদায়ী রয়ে যাচ্ছে।

    পচিশ. উপার্জনহীন স্ত্রীর গহনার যাকাত:

    এমন অনেক স্ত্রীলোক আছেন যারা গহনার যাকাত আদায় করেন না। তাদের যুক্তি, তাদের নিজস্ব কোনো আয় নেই, স্বামীও এ গহনার যাকাত আদায় করতে আগ্রহী নন। যাকাত অনাদায়ে তাদের এ ধরনের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এ সমাজে এমন অনেক স্ত্রীলোক আছেন যাদের শোকেচে অনেক দামি দামি শোপিচ, দামি দামি বাসন কোশন থাকে। ঘরে এমন অনেক ফার্নিচার আছে যার প্রয়োজনীয়তা খুব একটা নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যেই এসব ফার্নিচারের আবার বার্নিশ করতে হয় এবং তা যথা সময়েই হয়। নিজের আয় নেই বলে ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের এসব আসবাব পত্রের কমতি থাবে না এবং সময়মতো এগুলোর রং চং ও পরিচর্যাও বাকি থাকে না। আমরা এও জানি, যে গহনার যাকাত আদায় করতে এত হিমশীম(?) খেতে হচ্ছে, সে গহনাও সময়মতো কালার করা হয়, ছিঁড়ে গেলে মেরামত হয়। আর এ সবের অধিকাংশের আয়োজন ও যোগানই হয়ে থাকে ঐ বাড়ির গিন্নি পক্ষ্য হতে, কিন্তু উনি পারেন না শুধু যাকাতটাই আদায় করতে। এটা বড়ই ঝামেলা, খুবই কষ্টকর, এ দাবি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা পাঠকের ওপরই ছেড়ে দিলাম। সর্বোপরি কোনো মহিলা যদি যাকাত আদায়ে একেবারেই অপারগ হন, তাহলে তিনি তার গহনার কিছু অংশ বিক্রি করে তা দিয়ে যাকাত আদায় করবেন, তবুও ছাড় নেই।

    হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রূপার মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন এ ধন সম্পদকে আগুনের পাত বানানো হবে এবং জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। তারপর এগুলো দ্বারা তার পার্শ্ব, ললাট ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই ঠাণ্ডা হবে পূণরায় তা উত্তপ্ত করা হবে, এমন দিন যেদিনের পরিমাণ দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। এভাবে বান্দার পরিণতি জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তি চলতেই থাকবে।’ একবারও ভেবে দেখেছেন কি?  

    ছাব্বশি. হিরার যাকাত:

    সাধারণত স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যতীত অন্যান্য ধাতব বস্তু যেমন হীরা, মুক্তা, ইয়াকুত, মোতি, মুক্তাদানা, প্লাটিনাম, সাফাইর, টুপাজ, রুবি, হোয়াইট গোল্ড, গোমেদ-পীতবর্ণ মণি বিশেষ ইত্যাদি বস্তুর ওপর যাকাত ওয়াজিব হয় না, তার মূল্য যাই হোক না কেন। তবে ব্যবসার জন্য হলে ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অনুরুপভাবে কেউ যদি অর্থ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে বা টাকা আটকানোর উদ্দেশ্যে এসব মূল্যবান ধাতু জমা করে রাখে তাহলে তার বাজার মূল্য হিসাবে যাকাত দিতে হবে। কিন্তু এ খাতে জমানো অর্থের কজনইবা যাকাত দেয়?

    সাতাশ. সোনা-রুপার বাসনপত্রের যাকাত:

    কেউ কেউ সোনা বা রুপা দিয়ে বাসনকোসন তৈরি করে ঘরে রেখে দেয়। মনে করে এগুলো তো গহনা নয়, আর বাসন কোসনের তো যাকাত নেই, তাই এগুলোরও যাকাত দিতে হবে না। তাদের এরুপ ধারনা ঠিক নয়। সোনা বা রুপা দিয়ে যাই তৈরি করে রাখা হোক না কেন, হোক সেটা গ্লাস, প্লেট, পেয়ালা, কলম, ঘড়ি, বাসনপত্র বা ব্যবহারের এরুপ অন্য কিছু এগুলো মধ্যে যে পরিমান ওজনের স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকবে এর মোট মূল্যের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে দিতে হবে, এটি আদায় করা ফরয। মনে রাখতে হবে, বাসন কোসনের যাকাত নেই, তবে স্বর্ণ-রৌপ্যের তৈরি বাসনকোসনের অবশই যাকাত দিতে হবে। 

    আটাশ. পুরুষের ব্যবহৃত অলংকারাদির যাকাত:

    এ কথা প্রায় সকলেই জানে যে পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহার করা হারাম। হোক সেটা আংটি, ঘড়ি, ব্রেসলেট, গলার মালা, চশমার ফ্রেম, জামার বোতাম, কলম বা অনুরুপ কিছু। এসব ব্যবহার করা পুরুষের জন্য বৈধ নয়। হাদিসে এসেছে: স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ এবং পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে। (তবে পুরুষদের জন্য রৌপ্যের তৈরি কেবল আংটি ব্যবহার শর্তসাপেক্ষে অনুমতি আছে)

    যেহেতু পুরুষের জন্য অলংকার ব্যবহার হারাম তাই তার যাকাত দিতে হবে না বলে কেউ কেউ মনে করেন। কারণ হারাম জিনিষের যাকাত নেই। যেমন: সুদের টাকার যাকাত নেই। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইকৃত অর্থেরও যাকাত নেই। এই যুক্তি সঠিক নয়। বুঝতে হবে যে, পুরুষের ব্যবহৃত সোনা-রুপা আর নারীর ব্যবহৃত সোনা-রুপা তো আলাদা কিছু নয়, এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, মৌলগতভাবে তা হারাম নয়, হারাম পন্থায়ও সেটি উপার্জিত হয়নি। শুধু ব্যবহারের দিক থেকে একজনের জন্য নিষিদ্ধ এবং আরেকজনের জন্য বৈধ। এই কারণে তো আর তার যাকাত মওকুফ হবে না। মনে রাখতে হবে মায়ের স্তনের দুধ শিশুর জন্য হালাল এবং জরুরি, শিশুর বাবার জন্য তা নিষিদ্ধ বা হারাম। তাই বলে কি মায়ের সাথে বাবার সম্পর্ক নিষিদ্ধ? নিশ্চয় না। তাই পুরুষের জন্য সোনা-রুপার গহনা পরিধান করা হারাম হলেও ঐ গহনার যাকাত অবশ্যই দিতে হবে। কারো কারো অজান্তেই কিংবা ভুল জানার কারণে তার ‍জাকাত আদায় করা হচ্ছে না, অথচ তার উপর যাকাত ফরজ হয়ে আছে।  

    ঊনত্রিশ. সোনা-রূপার ক্রেষ্ট ও মেডেল এর যাকাত:

    অনেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সোনা ও রূপার তৈরি মেডেল পুরুস্কার স্বরুপ পেয়ে থাকে। গুণি ব্যক্তিদের বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ উপহার হিসেবে দেয়া হয় স্বর্ণের ক্রেষ্ট। এসব ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবদে জানা যায় এরা এসব মেডেল ও ক্রেষ্টের যাকাত আদায় করেন না। তাদের ধারনা এগুলো তো গহনা নয়, তাই এর যাকাত দেব কেন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে তা হলো: সোনা সাড়ে সাত ভরি আর রুপা সাড়ে বায়ান্ন ভরি জমা হয়ে এক বছরকাল থাকলেই তার যাকাত দিতে হবে। হোক সেটা গহনা, আসবাবপত্র, ক্রেষ্ট, কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি বা অন্যকিছু। সোনা-রুপার আকার আকৃতির পরিবর্তনের সাথে যাকাত ফরয হওয়া না হওয়া নির্ভর করে না। হুকুম নির্ভর করে এর ওজন বা পরিমান এবং সময়ের সাথে। উপরে বর্ণিত সময়কাল এবং পরিমান ঠিক থাকলে যাকাত আদায় করা ফরয।

    ত্রিশ. আয়কর প্রদত্ব সম্পদের যাকাত ও ওশর:

    কারো কারো ধারণা আয়কর দিলে আর যাকাত দিতে হবে না। আয়করও জনহিতকর কাজে ব্যয় হয়, যাকাতও তাই। অতএব আয়কর দিলে যাকাত মাফ। আসলে যাকাত ও আয়কর সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবে অনেকে যাকাত ও আয়করকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেন। কেউ কেউ মনগড়াভাবে এই দুটোকে একই বলে প্রচারও করে যাচ্ছে। এতে মুসলমানদের ফরয যাকাতের গুরুত্ব নষ্ট হচ্ছে। অনেকে যাকাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অথচ যাকাত ও সরকারের ট্যাক্স একই বিষয়বস্তু নয়। পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট। আয়কর ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য:

    *কর রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যাকাত আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নির্ধারিত ফরয। এ বিধান অপরিবর্তনশীল। কিয়ামত পর্যন্ত এর হুকুম থাকবে। এটি শুধুমাত্র মুসলমান সম্পদশালী নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য।

    *কর ধার্য হয় বাৎসরিক আয়ের উপর, ব্যয়ের ওপর নয়। সাংসারিক খরচ যাই হোক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না। নিজের ব্যয় নির্বাহের পর তা সঞ্চয় না থাকলেও কর দিতে হবে। কিন্তু যাকাত ধার্য্য হয় মালদারের বৎসরের প্রয়োজনীয় খরচ বাদে অতিরিক্ত সম্পদের উপর ভিত্তি করে।

    *কৃষকের ফসল হোক বা না হোক তাতে কিছু যায় আসে না। জমি থাকলেই, জমির উপর বাৎসরিক কর দিতেই হয়। কিন্তু উশর (যাকাত) কৃষকের কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপন্ন ফসলের উপর নির্ধারিত।

    *কোনো নাগরিক আবেদন করলে কর মওকুফ হতে পারে। কিন্তু যাকাত ধর্মীয় আইন, মালদার মুসলমান এ বিষয়ে গাফলতী করতে পারে না, এটা মওকুফ হবার নয়।

    *আয়কর হচ্ছে সরকারের সেবার বিনিময়। যেমন-সরকার আমাদের রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার, ওভারব্রীজ, সুয়ারেজ লাইন, পানির লাইন, আবর্জনা নিষ্কাষণ, পরিবেশ দূষণরোধ, আইন-আদালত, শৃঙ্খলা রক্ষা, মাল সম্পদের নিরাপত্তা, দেশের নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা নাগরিক সুবিধা দিয়ে থাকে। তার বিনিময়ে সরকার জনগনের কাছ থেকে ট্যাক্স বা কর নিয়ে থাকে। অর্থাৎ এটা সুম্পূর্ণ বিনিময় পদ্ধতি। অপরপক্ষে যাকাত কোনো কিছুর বিনিময় নয়। সম্পদশালীরা গরিবদেরকে কোনো প্রকার বিনিমিয় ছাড়া শুধু মহান আল্লাহর হুকুম মোতাবেক প্রতিবছর তাদের গচ্ছিত সম্পদের শতকরা ২.৫% প্রদান করে থাকে। আয়কর ও যাকাতের মধ্যে এরুপ আরো অনেক পার্থক্য আছে, যা এ ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। মোট কথা এ দুটি মোটেও এক নয়। একটি আদায়ের মাধ্যমে অপরটির অব্যহতি হয় না। নেসাব পরিমান সম্পদ থাকলে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে, তাতে সে আয়কর প্রদান করুক আর না করুক তাতে কিছু যায় আসে না।

    একত্রিশ. আম কাঁঠালের ব্যবসায়ীদের যাকাত:

    সাধারণত আম কাঁঠালের যাকাত নেই। কেননা আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, ইত্যাকার ফলগুলো পচনশীল। পচনশীল ফলমুল ও কৃষিপণ্যের ওপর যেহেতু যাকাত অর্থাৎ ওশর ফরয নয় তাই এর ওপর ভিত্তি করে আম কাঁঠালসহ মওসুমে ফলের কোনো কোনো ব্যবসায়ীরা ভেবে থাকেন যে, তাদেরও যাকাত নেই। এরুপ ধারণা ঠিক নয়। কেননা তারা তো মুনাফা লাভের আশায় এসব ব্যবসা করে থাকেন এবং মুনাফা করে থাকেন। তাই তাদের এসব ফলফলাদির ওপর যাকাত না থাকলেও এ খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং বিক্রি হতে অর্জিত টাকার যাকাত দিতে হবে, যদি তা নিসাব পরিমান হয়।

    বত্রিশ. ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লাগানো গাছের যাকাত:

    সাধারণত গাছের কোনো যাকাত নেই। এই হিসেবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যারা নার্সারি, হর্টিকালচার, বীজ উৎপাদন খামার, কৃষিখামার, বনজ বৃক্ষ খামার, ঔষধি গাছের খামার, চা-বাগান, রাবার বাগান, তুলা বাগান, রেশম বাগান, আগরগাছের বাগান  ইত্যাদি চাষাবাদ করে থাকেন বা গাছগাছরা লাগিয়ে থাকেন তারাও মনে করে যে তাদের এসবের কোনো যাকাত দিতে হবে না। তাদের এরুপ ধারনা ভুল। গাছ হতে উৎপন্ন, ফল, শস্য ইত্যাদি নিসাব তথা পাঁচ ওয়াসাক্ব পরিমাণ হলে তাতে ২০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, ৫ ওয়াসাক্ব সমান ৬০ ছাআ বা ৭৫০ কেজি। আর যে সকল গাছে ফল, সশ্য এবং বীজ কোনোটিই হয়না অর্থাৎ শুধু কাঠ হয়, তাহলে তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ নিসাব পরিমাণ হলে বা সে মূল্য অন্য অর্থের সঙ্গে মিলে নিসাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে। তাই গাছের যাকাত আছে।

    তেত্রিশ. খামারে পালিত নেসাবের চেয়ে কম সংখ্যক পশুর যাকাত:

    সাধারণত পশুর ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হলো: উটের যাকাতের নিসাব পাঁচ। ৫টি থেকে কম উট থাকে তাহলে এর ওপর যাকাত দিতে হবে না।

    গরু ও মোষের যাকাত:

    গরু ও মোষের  নিসাব ৩০টি। ৩০টির কম গরু-মহিষের জন্যে যাকাত নেই।

    ছাগল ভেড়া দুম্বার যাকাত:

    ছাগল, ভেড়া বা এ জাতীয় পশু আর দুম্বা একই শ্রেণীতে গণ্য করা হয়। এতে ছাগল, পাঠা, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা, দুম্বী সব অন্তর্ভুক্ত হবে।

    ছাগলের যাকাতের নিসাব হলো ৪০টি। এর কম সংখ্যার জন্যে যাকাত দিতে হবে না।

    কিন্তু এগুলো যদি খামারে পালিত হয় তাহলে পশুর প্রচলিত এ যাকাত নীতি প্রযোজ্য হবে না। বরং এগুলো তখন ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। তখন এগুলোর যাকাত হবে বার্ষিক ২.৫% টাকা হারে। তখন এগুলোর সংখ্যার ভিত্তিতে নয়; বরং এসবের মোট মূল্যের ওপর যাকাত নির্ধারিত হবে, যদি তা নিসাব পরিমান হয়।

    চৌত্রিশ. গরু ও মহিষ একত্রে ৩০টি হলে তার যাকাত:

    গরু-মহিষের যাকাতের নিসাব সর্বনিম্ন ৩০টি পশু থাকা। সাধারণ মানুষের কেউ কেউ বুঝে থাকেন যে, গরু এবং মহিষের সংখ্যা পৃথক পৃথকভাবে ৩০টি হতে হবে। তা না হলে যাকাত ধার্য হবে না অর্থাৎ গরু ও মহিষ মিলে যদি ৩০টি পশু হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে না। আসলে তা নয়। গরু ও মোহিষ একই শ্রেণীভুক্ত। আর এতে বলদ, পুরুষ ও গাভী  গরু মোষ প্রভৃতি সবই অন্তর্ভুক্ত হবে। অতএব এদের নিসাব ও যাকাতের পরিসীমা এর সম্মিলিত সংখ্যার ওপর নির্ণিত হয়। প্রত্যেক পশুর আলাদা আলাদা সংখ্যার ওপর নয়; তা কোনো একটির সংখ্যা নিসাবের সংখ্যা থেকে কম হোক না কেন। এসব পশুর (গাভী ও মোষ) যদি সম্মিলিত সংখ্যা নিসাবের সমান সমান হয় তাহলে যাকাত দেয়া অবশ্য-কর্তব্য। ৩০টির কম পশুর জন্যে যাকাত নেই। আর এসব জন্তর যাকাতের নিয়ম ৩০টি হলে তার জন্যে এক বছর বয়সের ১টি বাছূর গরু যাকাত হিসেবে দিতে হবে। তবে এসব পশু অবশ্যই খামারে পালিত হলে হবে না।খামারে পালিত পশুর যাকাতের নিসা অনেক কম।

    পঁয়ত্রিশ. ভেড়া, দুম্বা ও ছাগল মিলে ৪০টি হলে তার যাকাত:

    কারো কারো ধারণা ভেড়া, দুম্বা ও ছাগল পৃথক পৃথক ভাবে প্রত্যেকটি কমপক্ষে ৪০ পশু না হলে যাকাত দিতে হবে না। এ ধারণা সঠিক নয়। বুঝতে হবে গরু ও মহিষ যেমন এক প্রজাতি, ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলও অনুরুপ এক প্রজাতি। এদের যাকাত নির্ধারিত হতে পারে এদের প্রত্যেকটি একক অথবা সন্মিলিত সর্বনিম্ন সংখ্যার ভিত্তিতে। এসব পশুতে যাকাত ফরয সাব্যস্ত হওয়ার জন্য তাদের প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা সংখ্যা ৪০টি হওয়া শর্ত নয়। শুধু ছাগল ৪০টি হলে যেমন যাকাত ফরয, তেমনী ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা মিলে ৪০টি হলেও যাকাত দিতে হবে। বিষয়টি কেউ কেউ জানেন না।

    ছত্রিশ. ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কেনা ঘোড়া ও গাধার যাকাত :

    সাধারণত আরোহণ, মালপত্র পরিবহন, চাষাবাদ ও উপার্জন কাজের জন্য পালিত ঘোড়া ও গাধার কোনো যাকাত নেই। ঘোড়া ও গাধার যাকাত নেই এ কথা ভেবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী এসব পশুর ব্যবসা করে থাকেন কিন্তু তার যাকাত আদায় করেন না। আসলে তা ঠিক নয়। এসব পশুকে যাকাতের বাইরে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র মানুষের বিষেশ প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে। তাই বলে এ গুলোর ব্যবসা করলে যাকাত থেকে মাফ পাওয়ার সুযোগ নেই। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় বিক্রয় হলে ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের যাকাত দিতে হবে। শরহে বেকায়, পৃ.৫৩৬। তবে তখন এর যাকাতের হার হবে ২.৫% হিসেবে অর্থাৎ ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে, পশুর যাকাত হিসেবে নয়। 

    সাঁইত্রিশ. দুগ্ধ উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য পালিত পশুর যাকাত:

    আমরা জানি যে উটের যাকাতের নিসাব সর্বনিম্ন ৫টি, গরুর ৩০টি এবং ছাগলের ৪০টি। বর্ণিত সংখ্যক পশু থাকলেই যাকাত আদায় করতে হবে। তবে এর চেয়ে কম সংখ্যক পশু থাকলে যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পালিত পশুর যাকাত এ নীতিমালার বাইরে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কেউ দুগ্ধ উৎপাদন ও বিক্রয়ের নিমিত্তে পশু প্রতিপালন করলে সে পশুর যাকাতের নিসাব উটের বেলায় সর্বনিম্ন ৫টি, গরুর বেলায় ৩০টি এবং ছাগলের বেলায় ৪০টি ধর্তব্য হবে না। এর চেয়ে কম সংখ্যক পশু হলেও যাকাত ধার্য হতে পারে। তখন এর যাকাত ধার্য হবে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে। দুগ্ধ উৎপাদন, দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুধ জাতীয় পণ্য তৈরি করা হলে এগুলো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সকল প্রকার কাঁচামাল ও প্যাকিং সামগ্রী এবং গাভীর মূল্য যোগ করে যে টাকা হবে এর ২.৫% টাকা বার্ষিক যাকাত দিতে ।

    এমন কি যদি উক্ত গরুর খামার হতে গোশত প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রয় ও রপ্তানী করা হয় সেক্ষেত্রে দুধের মতোই গরু, কাঁচামাল ও প্যাকিং সামগ্রীর মোট মূল্যের ২.৫% টাকা বার্ষিক যাকাত দিতে হবে। তবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পদের কোনো যাকাত দিতে হবে না।

    আটত্রিশ. ফার্মের হাঁস-মুরগি ও পাখির যাকাত:

    সাধারণত হাঁস, মুরগি ও পাখির উপর যাকাত নেই। তবে এ কথা সর্বত্রই প্রযোজ্য নয়। প্রথমে এগুলো পালনের উদ্দেশ্য জানতে হবে। তারপর তার ওপর যাকাতের হুকুম প্রযোজ্য হবে। হাঁস, মুরগি, পাখি পালনের উদ্দেশ্য ৩ প্রকার। যথা-

    ১. সরাসরি পালিত হাঁস মুরগি ও পাখি বিক্রি করে লাভ উপার্জন করা উদ্দেশ্য (যেমন- ব্রয়লার মুরগি, কোক, ইত্যাদি),

    ২. হাঁস মুরগি ও পাখি পালন করে পূণরায় উৎপাদন (যেমন- ডিম, বাচ্চা ও পশম) বিক্রি করে লাভ উপার্জন করা উদ্দেশ্য

    ৩. হাঁস মুরগি ও পাখি পালন করে বা উৎপাদন করে সরাসরি অর্থ উপার্জন বা লাভবান হওয়া উদ্দেশ্য থাকবে না। বরং নিছক সখের বশবির্তী হয়ে পালন করা হবে অথবা কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে (যেমন- হাল দেওয়া, গাড়ি টানা, ঘানি ঘোরানো, মই দেওয়া ইত্যাদি) পালন করা হবে।

    ১ম প্রকারের হাঁস মুরগি ও পাখির যাকাত:

    ১ম প্রকারের পালিত হাঁস মুরগি ও পাখি সংখ্যার ওপর যাকাত ফরয নয়। বরং তাদের অনুমিত মূল্যের ওপর ব্যবসার সম্পদের মতো করে যাকাত ফরয হবে। সুতরাং মালিকের যাকাত দিবসে এ প্রকারের হাঁস মুরগি ও পাখির সম্ভাব্য বিক্রিয় মূল্য অনুমান করতে হবে। সেই অনুমিত মূল্য মালিকের অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে। অর্থাৎ মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ যদি মোট বিয়োগযোগ্য ঋণ বিয়োগের পর ৫২.৫ ভরি বা ৬১২ গ্রাম রুপার মূল্যে পৌঁছে তবে ২.৫% যাকাত ফরয হবে।

    ২য় ও ৩য় প্রকারের হাঁস মুরগি ও পাখির যাকাত:

    ২য় ও ৩য় প্রকারের হাঁস মুরগি ও পাখির সংখ্যার ওপর যাকাত ফরয হবে না এবং পাখির সম্ভাব্য অনুমিত মূল্যের ওপরও যাকাত ফরয হবে না। তবে এ দু‘প্রকারের হাঁস মুরগি ও পাখি বা এ থেকে উৎপাদিত কোনো কিছু যদি যাকাত দিবসের পূর্বেই মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করা হয় এবং মুদ্রা যাকাত দিবসে নগদে বা একাউন্টে স্থিতিতে থাকে তবে তা মালিকের অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে। অর্থাৎ মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ যদি মোট বিয়োগযোগ্য ঋণ বিয়োগের পর ৫২.৫ ভরি বা ৬১২ গ্রাম রুপার মূল্যে পৌঁছে তবে ২.৫% যাকাত ফরয হবে। অন্যথায় নহে। অনুরুপভাবে পোল্ট্রি ফার্মের ডিম উৎপাদনের জন্য হাঁস মুরগির সংখ্যা যতই হোক না কেন এগুলোর কোনো যাকাত দিতে হবে না। হাঁস মুরগি ও পাখি হতে উৎপাদিত ডিম ও বাচ্চার মুল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। হাঁস মুরগি ও পাখি এ ক্ষেত্রে কারখানার মেশিনারিজের মতো গণ্য হবে। ফার্মে পালিত এসব হাঁস মুরগি ও পাখির যাকাত সম্পর্কে সঠিক মাসআলা না জানার কারনে কার উপর কখন যে কোন সম্পদের যাকাত ফরজ তা অনেকেই জানে না।

    উনচল্লিশি. ডেইরী ফার্মের পশুর যাকাত:

    ডেইরি ফার্মের পশুর  যাকাত সংখ্যার ভিত্তিতে হবে নাকি ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে হবে তা নিয়ে খামারিরা সঙ্কায় ভোগেন। মনে রাখতে হবে বর্তমান যুগের ডেইরী খামারের প্রচলন পূর্বে ছিল না। বর্তমানে এর যাকাত নির্ধারনের জন্য মধুর যাকাত বা গুটি পোকা ও রেশমের যাকাতের মূলনীতি অনুসরন করে যাকাত নির্ধারন করা হয়েছে, যা নিম্নরুপ:

    ডেইরী খামারের যাকাতের শর্ত:

    ১) ডেইরী ফার্মের গবাদি পশু দুগ্ধ, মাখন উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পালিত হলে এসব পশু পন্য উৎপাদক পর্যায় ভুক্ত। তাই এসবের যাকাত দিতে হবে না। তবে উৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত দিতে হবে।

    ২) পশু মোটা তাজা করে বিক্রির জন্য পালিত হলে তার যাকাত দিতে হবে।

    চল্লিশ. বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত মাছের যাকাত:

    সাধারণত মাছের কোনো যাকাত নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত মাছের যাকাত দিতে হবে। কারণ তখন তা ব্যবসায়িক পণ্যের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত দেয়া ওয়াজিব। সাধারণত অতীতকালে পুকুর, নদী, জলাশয়, খাল ইত্যাদিতে মাছ চাষ করা হত; কিন্তু বর্তমানে ব্যপক হারে হাজার হাজার একর কৃষি জমিতে মাছ চাষ করা হয়। বিশেষ করে চিংড়ি চাষ এ ক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য। তাই আগেকার দিনে মাছের যাকাত দেবার প্রচলন না থাকলেও বর্তমানে তা দিতে হচ্ছে।

    সুতরাং বর্তমানে মৎস্য চাষীকে যাকাত তো দিতেই হচ্ছে, তবে তাকে কোন প্রকার যাকাত দিতে হবে-কৃষি জমিতে চাষের কারণে উশর দিতে হবে নাকি ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ব্যবসার যাকাত দিতে তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ভোগেন। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেমদের যে অভিমত পাওয়া যায় তা হলো:

    মাছ চাষ যদি কৃষি জমিতে না হয়ে পুকুর কিংবা নদী, খাল ইত্যাদিতে হয়ে থাকে এবং তাতে ব্যবসার নিয়ত থাকে তবে সর্বসম্মতিক্রমে তাতে উশর নয় বরং ব্যবসার যাকাত দিতে হবে। কিন্তু যদি মাছ চাষ করা হয় কৃষি জমিতে, যেমন: বর্তমানের চিংড়ি চাষ। তাহলে তাতে কোন প্রকার যাকাত ওয়াজিব হবে, তা নিয়ে মতভেদ আছে।

    কেউ কেউ বলেন, কৃষি জমিতে উৎপাদনের কারণে উশর এবং ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে যাকাত এ উভয় প্রকার যাকাত ওয়াজিব হবে। আবার কেউ বলেন, ব্যবসার যাকাত নয় বরং কৃষি যাকাত তথা উশর ওয়াজিব হবে। আর এই মতটি অধিক শক্তিশালী এবং এই মতের উপরই ফতোয়া। তাই যদি কেউ কৃষি জমিতে চিংড়ি চাষ করে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ব্যবসার যাকাত প্রদান করেন তাহলে তার যাকাত যথাযথভাবে আদায় হলো না।

    একচল্লিশ. খুলতা বা অংশীদারী কারবারের যাকাত

    খুলতা একটি আরবি পরিভাষা। এর অর্থ হলো যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসা। এটাকে শেয়ার বা অংশীদারী কারবার বা কোম্পানীও বলা যেতে পারে। শরীয়তের পরিভাষায় এটা গবাদি পশুর বেলায় প্রযোজ্য। যেমন ৫ জন মিলে একটি গরুর খামার করল। ধরা যাক, এ খামারে ১০০টি গরু আছে। এগুলো একই খামারের খাদ্য খায়। একই ব্যবস্থাপনায় পানি পান করে। রোগ বালায়ে খামারের তত্বাবধানেই এদের চিকিৎসা দেয়া হয়। যাকাতের বিধান মোতাবেক গরুর সংখ্যা ৩০টির বেশি হওয়ায় এতে যাকাত আদায় করা ফরয হিসেবে প্রযোজ্য। যদিও ৫ জনে ভাগ ১ জনের ভাগে ২০টি করে গরু পরবে। আর কারো ২০টি গরু থাকলে তাতে যাকাত ফরয নয়। এই ভেবে কেউ কেউ হয়তো যাকাত আদায় করেন না।    (চলবে)

    লেখক

    কলেজ শিক্ষক; সভাপতি, প্রত্যাশা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ ও বাংলাদেশ সাহিত্য ছাউনি।(drazzak77@gmail.com)

     

     


    দেশীয়’র আয়োজনে লেখক-প্রকাশক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ঢাকা

    দেশীয়’র আয়োজনে লেখক-প্রকাশক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

    বর্ণাঢ্য আয়োজনে পায়রা সাংস্কৃতিক সংসদের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন রংপুর

    বর্ণাঢ্য আয়োজনে পায়রা সাংস্কৃতিক সংসদের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

    বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির ঢাকা

    বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির

    সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান ঢাকা

    সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান

    দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক শোক সংবাদ

    দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক

    কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম ঢাকা

    কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম

    ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ ঢাকা

    ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত কর্মশালা

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

    বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন বরিশাল

    বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন

    যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন কবিতা পাঠ আসর

    যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন

    আসছে গাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘আমার মা’ প্রকাশনা

    আসছে গাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘আমার মা’

    মুখোমুখি কবি আসাদ বিন হাফিজ সাক্ষাৎকার

    মুখোমুখি কবি আসাদ বিন হাফিজ

    মানিকগঞ্জ সাংস্কৃতিক সংসদের পথ চলা শুরু ঢাকা

    মানিকগঞ্জ সাংস্কৃতিক সংসদের পথ চলা শুরু

    প্রকাশিত হলো শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের ‘ইসলামে চলচ্চিত্র ও নাটক’ বইমেলা

    প্রকাশিত হলো শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের ‘ইসলামে চলচ্চিত্র ও নাটক’

    ফিলিস্তিনি 'কবিতা বারুদ' জ্বালালো কবিতা বাংলাদেশ অনুষ্ঠান

    ফিলিস্তিনি 'কবিতা বারুদ' জ্বালালো কবিতা বাংলাদেশ

    শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক ছড়া-কবিতা লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন দিবস পালন

    শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক ছড়া-কবিতা লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন

    সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় ১০ ইসলামী গান গান

    সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় ১০ ইসলামী গান

     শিল্পী রাকিবুল হাসানের মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক শোক সংবাদ

    শিল্পী রাকিবুল হাসানের মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক

    সাক্ষাৎকারমূলক জীবনীগ্রন্থ ‘আলাপে সংলাপে’ এর মোড়ক উম্মোচন খুলনা

    সাক্ষাৎকারমূলক জীবনীগ্রন্থ ‘আলাপে সংলাপে’ এর মোড়ক উম্মোচন

    সীরাতুন্নবী (সা:) উদযাপন উপলক্ষে নোসাসের  সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৩ অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতা

    সীরাতুন্নবী (সা:) উদযাপন উপলক্ষে নোসাসের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৩ অনুষ্ঠিত