২১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ পি এম
কার্টুন মানুষকে শুধু হাসির খোরাক দেয় না, এটি অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যমও। কার্টুনকে স্বয়ং হিটলারও ভয় পেতেন। যেসব জায়গায় স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটে, সেখানে কার্টুন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী ভূমিকা রাখে। ১৯ অক্টোবর শনিবার রাজধানী শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ শীর্ষক কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনীতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের অনাচার-লুটপাট নিয়ে আঁকা কয়েক’শ কার্টুন নিয়ে ১১ দিনব্যাপী চলা প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠান এদিন বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীটির যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট ফোরাম ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। এতে জায়গা পেয়েছে বিভিন্ন সময় আঁকা ২৬২টি কার্টুন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের অনারারি প্রফেসর চিত্রশিল্পী ড. আব্দুস সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের সেক্রেটারি ড. মনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির সভাপতি আবেদুর রহমান, প্যানভিশন টিভির সিইও মাহবুব মুকুল প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট ফোরামের সভাপতি কার্টুনিস্ট ইব্রাহীম মণ্ডল।
বক্তারা বলেন, গত ১৬ বছর আমাদের দেশে স্বৈরশাসক অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। এই স্বৈরাচারের হাতে প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছে। কার্টুনিস্টরাও ১৬ বছর ধরে কার্টুন এঁকে ব্যঙ্গ ও প্রতিবাদ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর সকালে এর উদ্বোধন করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
স্বৈরাচারের ১৬ বছরের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি শিল্পীর আঁচড়ে প্রচণ্ড প্রতিবাদ, বিদ্রোহ হিসেবে ফুটে উঠেছে। ২০১২ সালে আঁকা আসিফুল হুদার একটি কার্টুনে দেখা যায়, একজন সাংবাদিক দৌড়ে পালাচ্ছেন। তাঁকে তাড়া করছেন মুজিব কোট পরা অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি ও একজন পুলিশ সদস্য। এমন অবস্থায় তাড়া খাওয়া সাংবাদিকের সামনে রয়েছে তিনটি পথ। হাসপাতাল, জেলখানা আর গোরস্থান।
একই কার্টুনিস্টের ২০১৩ সালে আঁকা একটি চিত্রে দেখা যায়, বক্তব্য দিচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দরজার আড়ালে থেকে উঁকি দিয়ে শেখ হাসিনা এনবিআর কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘বিদেশে লেকচার দিয়ে আর বই লিখে অনেক ডলার কামিয়েছেন...বিগ ক্রাইম, টেক অ্যাকশন।’ হুদার ২০১৭ সালে আঁকা আরেকটি কার্টুনে দেখা যায়, মুখে তালা মারা এক ব্যক্তিকে সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন, ‘কারা আপনাকে গুম করেছিল বলুন।’ পাশে বসে থাকা এক নারী উত্তরে বলছেন, ‘মুখ খুলবে কী করে?!... চাবি তো উনাদের কাছে।’
প্রদর্শনীতে আসিফুল হুদা, মেহেদী হক, আমিনুল ইসলাম, অপু, মোরশেদ মিশু, খলিল রহমান, জাহিদ হাসান বেনু, বিপ্লব, কে মাহমুদ, তন্ময় ও ইব্রাহীম মণ্ডলের ২৬২টি কার্টুন স্থান পেয়েছে। এসব কার্টুনে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের অর্থনীতি, শেয়ারবাজার, উন্নয়ন, গণতন্ত্রের হালচাল, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, গুম-খুন, উচ্চ আদালতের অবস্থা, ভারতের দাদাগিরি, দুর্নীতিবাজ নেতা, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
মেহেদী হকের একটি কার্টুনে দেখা গেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদকে। একটি বাটিতে খাবার নিয়ে হারুন ইংরেজিতে জানতে চাইছেন, ‘হাংরি?’। বাটিতে লেখা রয়েছে ‘ম্যাজিক রেসিপি’। মেহেদী হকের আরেকটি কার্টুনে বকের মতো উড়তে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। হাস্যরত বকদেহী সাকিবের গলা অবধি টাকা আর টাকা, এরই মাঝে তিনি বলছেন, ‘তারপর? দেশের জন্য আপনি কী করছেন?’