১০ মে, ২০২৫ ১১:৪৪ এএম
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী মারা গেছেন। শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গণমাধ্যমকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী। মুস্তাফা জামানের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের সেক্রেটারী ড. মনোয়ারুল ইসলাম। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মুস্তাফা জামান আব্বাসী একজন শক্তিমান লোক সংগীতশিল্পী, সুরকার, গবেষক ও লেখক। নজরুল গবেষণা ও সংগীতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশ একজন গুণীজনকে হারালো।’ তিনি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে আব্বাসীর রূহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্যধারণের তৌফিক কামনা করেছেন।
মরহুমের জানাজার নামাজ বাদ যোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভারতীয় উপমহাদেশের এক প্রখ্যাত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্বাসউদ্দীন আহমদ পল্লিগীতির কিংবদন্তি শিল্পী। চাচা আব্দুল করিম ছিলেন পল্লিগীতি ও ভাওয়াইয়া–ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল আইনবিশারদ। মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামালও একজন বরেণ্য শিল্পী। মুস্তাফা জামানের বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের প্রথিতযশা বহুমাত্রিক প্রতিভার সংগীতজ্ঞ হিসেবে সমাদৃত।
এই শিল্পীর জন্ম ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বরে। তার শৈশব ও কৈশোরকাল কেটেছে কলকাতায়। তার পরিবারের সঙ্গে কবি কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল।
মুস্তাফা জামানের শিক্ষাজীবন কলকাতায় শুরু হলেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন ঢাকায়। তিনি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পাস করেন। এ শিল্পী বেতার ও টেলিভিশনে সংগীতবিষয়ক অনেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। পত্রপত্রিকাতে তিনি একজন সুখপাঠ্য কলাম লেখক হিসেবেও সুপরিচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ, হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং অধ্যয়ন, দীর্ঘদিন শিল্পগোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপকসহ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্র’ এর গবেষক ছিলেন। নজরুল ইসলামকে নিয়ে তার কাজের জন্য তিনি ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।