খুলনায় দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে খুলনাঞ্চলের দিনব্যাপী কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে এই কালচার লিডারশীপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদ খুলনাঞ্চলের পরিচালক সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদ খুলনাঞ্চলের অন্যতম উপদেষ্টা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

উক্ত প্রোগ্রামে প্রধান আলোচক ছিলেন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের সেক্রেটারি ড. মনোয়ারুল ইসলাম। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা রাখেন বাংলাদেশ সঙ্গীত কেন্দ্রের সহ-সভাপতি গীতিকার ও কবি আবু তাহের বেলাল এবং দেশীয়র মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক লেখক-গবেষক সালমান রিয়াজ। শুরুতেই দারসুল কুরআন পেশ করেন খুলনা জেলা সাংস্কৃতিক বিভাগের উপদেষ্টা মাওলানা গোলাম সরোয়ার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর প্রেরণা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এবং বাগেরহাট জেলার উপমা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা রেজাউল করিম।

প্রধান অতিথি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ অপসংস্কৃতিতে ভরে গিয়েছিলো। কোথাও ইসলামিক জলসা হলেই সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতো। কোথাও শর্তসাপেক্ষে ওয়াজ মাহফিল ও জলসা করতে দিতো, আবার কোথাও দিতোই না। কারণ সংস্কৃতি জাতিসত্ত্বাকে উজ্জীবিত করে। যাতে মুসলমানরা সংস্কৃতি চর্চা করে জাতিকে উজ্জীবিত করতে না পারে সেই চেষ্টাই করছিলো ফ্যাসিবাদীরা। তখন সর্বত্র অপসংস্কৃতিতে সয়লাব ছিলো। সেই অপসংসস্কৃতির মোকাবেলায় কাজ করেছিলো শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকরা। জুলাই আন্দোলনে তাজা রক্ত দিয়ে সেই অবস্থার পরিবর্তন করেছে ছাত্র-জনতা।

‘বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশ: সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয়’ বিষয়ে আলোচনায় কবি আবু তাহের বেলাল বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে সাহিত্য-সংস্কৃতির ভূমিকা অপরিসীম হিসেবে কর্মীদের হৃদয়ে গেঁথে নিতে হবে। বিদ্রোহী বা চেতনার সূরে কাজী নজরুল ইসলামের পরেই কবি মতিউর রহমান মল্লিকের অবস্থান। তিনি আজীবন চেষ্টা চালিয়েছেন তৃণমূলে সুস্থ সংস্কৃতির প্রচলন করার। তারই উত্তরসূরী বা কর্মী হিসেবে সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে আমাদের সংস্কৃতির ধারা পৌঁছে দিতে হবে।’

‘বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশ: সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয়’ বিষয়ে আলোচনা রাখেন বিশিষ্ট কবি আবু তাহের বেলাল। ছবি: কালচারাল টাইমস

প্রধান আলোচক দেশীয়’র সেক্রেটারি ড. মনোয়ারুল ইসলাম ‘সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা’ শীর্ষক আলোচনায় বলেন, অনেক চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে আমরা আজ এ পর্যন্ত পৌঁছেছি। সাহিত্য-সংস্কৃতিক বীজ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়ার মূলমন্ত্র নিয়ে মাঠে সক্রিয় ছিলেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। তার বাকী কাজ আঞ্জাম দেয়া আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আমাদের যা আছে, যেটুকু সক্ষমতা-যোগ্যতা আছে, তাই নিয়ে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। প্রত্যেক গ্রাম-মহল্লায় সাহিত্য-সংস্কৃতিক কাজ ছড়িয়ে দিতে হবে।

‘সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রচার-প্রসারে মিডিয়ার ভুমিকা’ শীর্ষক আলোচনা রাখেন দেশীয়’র মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক লেখক-গবেষক সালমান রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘মিডিয়া জগতে আমরা প্রবেশ করব কি করব না- এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধন্দে ছিলাম। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মিডিয়ারও উন্নতি হচ্ছে। তবুও আমরা সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতির প্রসারে মিডিয়াকে ব্যবহার করছি না। অথচ অপসংস্কৃতির শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার শক্তি কাজে লাগাচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে শক্তিশালী একেকটি মিডিয়ার ভুমিকা পালন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সোচ্চার হতে হবে।’

‘সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রচার-প্রসারে মিডিয়ার ভুমিকা’ শীর্ষক আলোচনা রাখেন দেশীয়’র মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক সালমান রিয়াজ। ছবি: কালচারাল টাইমস।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেছেন, সংস্কৃতি কেবলই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের মনন ও চিন্তার উৎকর্ষ সাধনে নয়; জাতীয় জীবনের উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করতে পারলে একটি জাতির পরাজয় বা পতন ঠেকানো খুবই কঠিন। জায়নবাদী গোষ্ঠীর দোসররা আমাদেরকে সাংস্কৃতিকভাবে পরাস্ত করবার ষড়যন্ত্র সবসময় অব্যাহত রেখেছে। এখন আমাদের উচিত তাদের পাতানো ফাঁদে পা না দেওয়া। এবং এইসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা। আমাদের নিজস্ব সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

উক্ত প্রোগ্রামে বাগেরহাট জেলার সাংস্কৃতিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম, খুলনা মহানগরী সাংস্কৃতিক সম্পাদক মীম মিরাজ হোসাইন, খুলনা জেলার সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রভাষক নুরুজ্জামান মল্লিক, সাতক্ষীরা জেলার সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রভাষক মো. ওমর ফারুক, প্রেরণা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ খুলনার সভাপতি নাজমুল কবীর, সেক্রেটারি শাহ মাখদুম, খুলনা জেলার জাহানাবাদ সাংস্কৃতিক সংসদের পরিচালক মাওলানা হেলাল উদ্দিন, সাতক্ষীরা জেলার পূর্বাভাস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি এডভোকেট আবু তালেব ও সেক্রেটারি ড. ইউনুস আলী, বাগেরহাটের উপমা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের পরিচালক অধ্যাপক হায়দার আলী ও সহকারী পরিচালক মোড়ল শরীফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।