১ জুলাই, ২০২৪ ১৭:১৮ পি এম
২০১৩ সাল। কাশিমপুর-১ কারাগারে বিকেল বেলা। প্রতিদিনের ন্যায় গান-আড্ডার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
হঠাৎ ডাক পড়লো কবি আসাদ বিন হাফিজ ভাই এসেছেন, দেখা করতে হবে। দৌঁড়ে গেলাম আমদানি ঘরে। দেখার হওয়ার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি এখানে কিভাবে এলেন?
বললেন- পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে বললো, বড় অংকের টাকা দেন নইলে বড় মামলা দিয়ে জেলখানায় পাঠাবো।
আমি বললাম- দেশের মধ্যে এমন একটা জায়গা আছে যেখানে মানুষ টিকেট কেটেও যেতে পারে না, টাকা খরচ করেও যেতে পারে না। আমাকে বরং সেখানেই পাঠিয়ে দেন, টাকা দিতে পারবো না। তারপর চলে এলাম।
আমি বললাম, আপনার কী কী প্রয়োজন জানাবেন।
উনি বললেন, আমার জন্য পানের ব্যবস্থা করো।
জেলের মধ্যে পান পাওয়া কঠিন ছিলো। মাথায় আসলো সুত্রাপুর/গেন্ডারিয়া থানার আমীর আব্দুল জব্বার ভাই আমাদের বিল্ডিংয়ে। ব্যাপক পান খেতেন। বিষয়টি মাথায় আসতেই দৌঁড়ে গেলাম জব্বার ভাইয়ের কাছে। (জব্বার ভাই এখন আল্লাহর জিম্মায়)।
পান পেয়ে আসাদ ভাই ব্যাপক খুশি। সাথে দিয়ে আসলাম একটা কলম আর প্যাড। বললাম, এবার আপনার ডিউটি শুরু করুন ‘পানের বিনিময়ে গান’।
আলহামদুলিল্লাহ পরের দিন সকালে গিয়ে দেখি ৩টা গান রেডি। এর মধ্যে একটা গান হলো-
ডান্ডাবেড়ি বাজে
অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বিপ্লবীরা সাজে।
আরও লিখলেন-
মাগো মা আমার কথা ভেবে ভেবে আর কান্দিস না,
কারাগারে বন্দি কেন ছাত্রনেতা দেলোয়ার,
দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ,
কোন অপরাধ করিনি।
পরে এই গানগুলো শিল্পী মশিউর রহমান ভাইয়ের সুরে 'কারাগার সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ-কাসাস এর ‘জেলখানার গান’ শিরোনামে অ্যালবামে প্রকাশিত হলো।
এভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে প্রায় ৩৫টা গান লিখে ফেললেন কবি আসাদ বিন হাফিজ।
আজ এগুলো স্মৃতি।
গত রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে (১ জুলাই) একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জান্নাতের বাগানে আমাদেরকে একত্রিত হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।