সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম :
  • বাঁধনহারা’র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে সাহিত্য সম্মেলন ও ৫ম সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫ বাঁধনহারা’র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে সাহিত্য সম্মেলন ও ৫ম সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫ কবি মুকুল চৌধুরীর ইন্তেকাল কবি মুকুল চৌধুরীর ইন্তেকাল দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব কাল দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব কাল রোযা ও মাহে রমযানে অবহেলিত আমল রোযা ও মাহে রমযানে অবহেলিত আমল আলাপে সংলাপে: মাওলানা গোলাম বারী সাক্ষাৎকারের যত কথা আলাপে সংলাপে: মাওলানা গোলাম বারী সাক্ষাৎকারের যত কথা বগুড়ায় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি সম্মেলন ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বগুড়ায় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি সম্মেলন ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে জাগরুক রাখতে কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা প্রয়োজন জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে জাগরুক রাখতে কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা প্রয়োজন গাজীপুর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ-এর সাংস্কৃতিক কর্মী সম্মেলন গাজীপুর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ-এর সাংস্কৃতিক কর্মী সম্মেলন শহীদ সিরাজীর নতুন বই ‘মক্কা থেকে মদিনায়’ শহীদ সিরাজীর নতুন বই ‘মক্কা থেকে মদিনায়’
  • আলাপে সংলাপে: মাওলানা গোলাম বারী সাক্ষাৎকারের যত কথা

    আবদুল হালীম খাঁ

    ১৩ মার্চ, ২০২৫ ১১:২৩ এএম

    আলাপে সংলাপে: মাওলানা গোলাম বারী সাক্ষাৎকারের যত কথা

    আলাপে সংলাপে একটি সাক্ষাৎকার গ্রন্থ। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন তরুণ সাহিত্যকর্মী জাকির হুসাইন। আবীর প্রকাশন থেকে প্রকাশ করেছেন ইয়াসিন মাহমুদ। ভূমিকা লিখেছেন আন্তর্জাতিক  ইসলামী স্কলার বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. আবদুস সালাম আজাদী। যার সাক্ষাৎকার নিয়ে তৈরি হয়েছে এতো বড় সুন্দর গ্রন্থ তিনি মাওলানা এ ইউ এম গোলাম বারী। মাওলানা গোলাম বারী একজন কীর্তিমান এবং সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, একজন বিশিষ্ট গুণীজন। আমাদের সমাজে অনেক গুণী ও খ্যাতিমান ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের কারো কারো জীবনীগ্রন্থ লেখা হয়েছে। কিন্তু তাদের কারো সাক্ষাৎকার নিয়ে গ্রন্থ রচিত হয়েছে খুবই কম। এ জন্য আলাপে সংলাপে অবশ্যই একটি বিরল এবং ব্যতিক্রমধর্মী  গ্রন্থ।

    মাওলানা গোলাম বারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে যিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যিনি গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন এবং যিনি গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন-তারা তিনজনই মাওলানা গোলাম বারী সাহেবের কীর্তিমান এবং গুণমুগ্ধ ছাত্র। ছাত্র না বলে শিষ্য বললেই বোধহয় তাদের শ্রদ্ধা এবং আন্তরিকতার গভীরতা ব্যক্ত হবে। যেমন গুণী উস্তাদ তেমনি তাঁর হাতে গড়া গুণমুগ্ধ শিষ্য। যাকে বলে- উস্তাদ কা শিষ্য।

    বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘আলাপে সংলাপে’ অবশ্যই একটি দৃষ্টান্তমূলক গ্রন্থ। এ গ্রন্থ পাঠ করে হয়তো অন্য ছাত্ররা তাদের উস্তাদকে নিয়ে গ্রন্থ রচনা করতে উৎসাহী হবেন।
    গ্রন্থটির আলোচনার আগে মাওলানা গোলাম বারী সাহেবের কিছুটা পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। তাঁর পরিচয় ভূমিকা লেখক ড. আব্দুস সালাম আজাদী, সম্পাদক জাকির হুসাইন এবং প্রকাশক ইয়াসিন মাহমুদ এর লেখায় কিছুটা উঠে এসেছে। তাদের লেখা থেকেই কিছু অংশ তুলে ধরছি। 
    আজাদী সাহেব লিখেছেন-
    ‘‘শায়খ আবু উমায়ের মুহাম্মদ গোলাম বারী ছিলেন জয়নগর আমিনিয়া মাদ্রাসার কৃতি ছাত্র। ছারছীনা মাদ্রাসার সেরা ছাত্রদের একজন এবং তার ছাত্রজীবনের বন্ধুদের মাঝে মেধাবীদের একজন হিসেবে বিবেচিত হতেন। তিনি জয়নগর মাদ্রাসার শিক্ষক হবেন বলে পরিবারের সবাইকে এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর আব্বা মহিউদ্দীন সাহেব বললেন- এখন বয়স অল্প। আরেকটা কামিল দাও। এরপর ছারছীনা, খুলনা আলীয়া ইত্যকার মাদরাসার মুহাদ্দিস হও। তিনি সব শুনে বলেছিলেন- আমি আমার গ্রামকে আবাদ করতে চাই। আপনারা দোআ করুন যেন জয়নগর মাদরাসায় থাকার সিদ্ধান্ত যেন আল্লাহ কবুল করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত মাত্র ১৪ বছরের এই আমার কিশোর মস্তিষ্কে খুব বিরক্তিকর মনে হয়েছিল। কিন্তু যে ঈমানে দ্যুতি সেদিন দেখেছিলাম তাঁর হৃদয়ে। যে ত্যাগের আকাক্সক্ষা সেদিন ফুটে উঠেছিল সৌম্য শান্ত চেহারায় আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। তাতে অবশ্যই ছিল হেরার রাজতোরণের হাতছানি। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তিনি বলতেন, শুধু জয়নগর নয়, ভাবো ভাবো তুমি বিশ্বের সাথে পাল্লা দিচ্ছো। তাঁর সাথে আমার জীবন বাঁধ। তার জ্ঞানের সুরভি আমার মেধায়, তাঁর সাহিত্যিকতার ঔজ্জ্বল্য আমার কলমের ডগায়, তাঁর হৃদয়বৃত্তির উদ্বোধন আমার সুরভিত শব্দের গতরে, তাঁর দিগন্তভেদী চিন্তায় আমার আন্তর্জাতিকতা। এবং মজার কথা, তাঁর ভাতিজি আজ আমার জীবনসঙ্গিনী। কীভাবে গ্রামের মাঝে জেলার সেরা প্রতিষ্ঠান করা যায়, তার সফল দিকনির্দেশক তিনি।”
    উল্লেখিত মন্তব্য থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় মাওলানা গোলাম বারী একজন সংগঠক, শিক্ষাবিদ, সুদক্ষ শিক্ষক, সমাজসেবক এবং মানুষ গড়ার কারিগর ছিলো। শুধু তাই নয় তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্রষ্টা। 
    গ্রন্থটির প্রকাশক ইয়াসিন মাহমুদ লিখেছেন, মাওলানা এ ইউ এম গোলাম বারী এমনই এক বটবৃক্ষ যার ছায়ায় ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে আরো অনেক বটবৃক্ষ। এটা তাঁর পরম সৌভাগ্য। ব্যক্তিগত জীবনে হাসি খুশি থাকতে পছন্দ করেন তিনি। চলনে বলনে এখনও টগবগে তরুণের মতো। তবে বরাবরই নিজেকে লুকাতে চান তিনি।

    মাওলানা গোলাম বারী শুধু মাদরাসায়ই শিক্ষকতা করেননি তিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। 

    জনাব জাকির হুসাইনের সম্পাদকীয় থেকে জানা যায়। তিনি লিখেছেন:
    তাঁর সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি শৈশবে। তিনি তখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। তখন ভোটের সময় রাস্তার পাশের দেয়ালে লিখে ভোটের প্রচার করা হতো। আব্বার সাথে নওয়াবেঁকি ছোট বোনের বাসায় যাওয়ার পথে, রাস্তার পাশ দিয়ে ঘরের দেয়ালে, পাঁচিলের দেয়ালে, দোকানের দেয়ালে নীল লাল কালি দিয়ে মোমবাতি এঁকে ভোটের প্রচারণা করা থাকতো। সেখান থেকে হজুরের নাম প্রথম শুনি। ২০১২ সালে যখন নবম শ্রেণিতে জয়নগর মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম তখন থেকেই তার কাছাকাছি আসতে পেরেছি অল্পবিস্তর। আমাদের সাথে তাঁর ক্লাস না থাকলেও বিভিন্ন উপলক্ষে দেয়া বক্তব্য এবং উপদেশ নির্দেশনা দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছি জীবনে। 

    সাক্ষাৎকার গ্রন্থটি শুধু প্রশ্ন আর তার জবাবে রচিত হয়েছে।
    পাঠকদের বুঝার সুবিধার জন্য বিষয়ের ভিত্তিতে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। সূচিক্রমে বিষয়গুলো হলো:
    শৈশবের দিনগুলো, পড়ালেখা পরিভ্রমণ, সংসার ও পরিবার, কর্মজীবনের বাঁকে বাঁকে, শিক্ষা ভাবনা, রাজনীতি, জীবনবোধ। পরিশিষ্টে রয়েছে- ১. একনজরে এ ইউ এম গোলাম বারী, ২. আরবী বক্তৃতার লিপি ৩. স্বরচিত কবিতা এবং অ্যালবাম।

    মাওলানা গোলাম বারী বিশাল এক কর্মময় জীবনের অধিকারী। গ্রন্থকার তার প্রশ্নের মাধ্যমে মাওলানার শৈশব থেকে জীবনের সকল দিকই তুলে ধরতে চেয়েছেন। আমার আলোচনার মূল বিষয় হলো প্রথমত: লেখকের আলাপে সংলাপে গ্রন্থটির উপর এবং দ্বিতীয় বিষয় হলো মাওলানা গোলাম বারীকে লেখক তার প্রশ্নের মাধ্যমে কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। 
    কথায় বলে, মেন্দীর রঙ প্রকাশিত হয় পিষে যাবার পর। মেন্দী পাতার রঙ পিষে যাবার আগে অন্যান্য পাতার মতো একইরূপ সবুজ থাকে। পিষে যাবার পর তার আসল রূপ প্রকাশিত হয়ে পড়ে। তেমনি মাওলানা গোলাম বারীর আসল রূপ-রঙ প্রকাশিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করার পর। ইসলামের নাম- লেবাসধারী দেশে অনেক অনেক আলেম, মুহাদ্দিস, হাফেজ, ক্বারী মুফতী রয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে পরিপূর্ণ ইসলাম নেই। এমনকি অনেকে ইসলামের নাম নিয়েই ইসলামের বিরোধিতা করে বাতিলের পদতলে পড়ে রয়েছেন। মাওলানা গোলাম বারী এক সময় তাদের মতো ইসলামবিরোধী ছিলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন। তিনি সত্যসন্ধানী বলেই শেষে সত্য খুঁজে পেয়েছেন।

    মাওলানা গোলাম বারী বলেছেন- একসময় আমাদের হাফেজ্জী হুজুর বলেছিলেন, সিয়াসাত বা রাজনীতি একটা গন্ধ জিনিস। অথচ তিনি শেষজীবনে গিয়ে রাজনীতি করেছেন, ভোটও করে গেছেন। 
    আমি এখানে গোলাম বারী সাহেবের প্রশ্নে উত্তরে মাওলানা মওদূদী, জামায়াতে ইসলামী, নিজের রাজনীতি করা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং জামায়াতের কাজে তাঁর আন্তরিক মনোভাব ও কষ্ট স্বীকার সম্পর্কে যে সব সুন্দর সুন্দর মতামত পেশ করেছেন সেগুলো খুব সংক্ষেপে পাঠকদের অবগতির জন্য তুলে ধরছি। সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি দেয়া সম্ভব নয় বলেই কেটে ছেটে বলতে হচ্ছে।

    মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে তিনি বলেছেন,
    সৌদিতে যখন ছিলাম,  সৌদিতে মাওলানা মওদূদীকে সম্মানের সাথে সম্বোধন হয় আল-উস্তাদ আল-মওদূদী। মানে বিশ্বের উস্তাদ বহু আছে মাওলানা মওদূদী (রহ.)-কে বিশিষ্ট একজন উস্তাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সুদ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপরে বই লিখেছেন তিনি। আধুনিক সমস্যার সমাধানে ইসলামের বক্তব্য হাজির করেছেন। কে এমন আছে আর? অনেক কঠিন সমস্যাগুলো ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে মাওলানা মওদূদী আগে কেউ ছিল না এবং আমার মনে হয় এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে এ ধরনের চিন্তাশীল মনীষী আছেন কিনা আমার সন্দেহ হয়। আমি মদীনায় গিয়ে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এবং আমাদের মিশরের অনেক স্যারেরাও তাঁকে অনেক শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতেন এবং মদিনা ভার্সিটির সিলেবাসের অনেক বই উনার লেখা। কিন্তু এদিকে আমরা তাঁকে গালি দিই। সমালোচনা করি না জেনে। আর যাদের জমিনে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে; যাদেরকে বাবুল উলামা বা যায় আলেমের দরজা বলা হয়, আবর বিশ্ব তাদের ভাষা হলো আরবী, তারা তাকে কতো সম্মান করে থাকে। আর মূল ইসলামের উসুল এটা তো কুরআন এবং হাদীসের উপর ভিত্তি করেই। যারা পরেছে, যেখানে সেটার উৎপত্তি স্থান, সেখানে বড় বড় শায়েখ তারা মাওলানা মওদূদীকে মর্যাদা দিচ্ছেন এবং তাঁর বই সিলেবাসভুক্ত করেছেন। যেখানে আমরা তাঁর বিরোধিতা করছি। মানে আমরা আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের সাথে টেক্কা দেয়ার চেষ্টা করছি মনে হয়।
    আমার মনে হয় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, জামায়াতে ইসলামী বর্তমান বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী ইসলামী আন্দোলন। শুধু বংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বেও। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই আমার মনে হয় যেখানে জামায়াতে ইসলামী নেই। মুসলিম ব্রাদারহুড, ইখওয়ানুল মুসলিমিন, একেক দেশে একেক নামে হচ্ছে। কিন্তু সবার মূল টার্গেট হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। সবার মূল উদ্দেশ্য একই কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর দ্বীনের প্রচার এবং আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করা।

    প্রশ্ন: ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি কারাবরণও করেছেন। সাতক্ষীরা যাবার সময় বাসসহ ধরল। সেই ঘটনা যদি বলেন-
    জবাব: আমার মা খুবই চিন্তিত ছিলেন। তখন আমি প্রিন্সিপাল। আমার সাথে অনেক ছাত্রও ছিল। আমরা মাদানী ফাউন্ডেশন থেকে দুটো খেয়ে আমি মাদরাসা থেকে আছি। ঐ দিন তোমার চাচি আম্মা বলছেন যাবেন? এখন তো দেশের অবস্থা ভালো না। আমি বলেছিলাম, তোমার মেয়ে বিয়ে দেয়া হয়ে গেছে, ছেলেরা খুটে খেতে শিখেছে। এখন যদি পুলিশে ধরে এখন তো জেল খাটার সময়। আমার কোনো টেনশন নেই। মেয়ের টেনশন? মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে।... এই বলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। আমার খুব ভালো মনে আছে। তখন ছিলো ২০১২ সাল, ফেব্রুয়ারি মাস। আবার সাথে ছিল ১০৭ জন।

    ওদিন এদের নির্দেশ ছিল কোনো গাড়ি যেন সাতক্ষীরায় না যায়। ঐদিন সাতক্ষীরায় সবাবেশ ছিল। সাঈদী সাহেবের ফাঁসির অর্ডার হবে তার প্রতিবাদ। আমরা প্রতিবাদ মিছিলে যাচ্ছিলাম। ঐ দিন তো শুধু আমরা না। বহুত গ্রেফতার হয়েছিল সাতক্ষীরা থেকে। ওরা কখন ভাড়াশিমলা থেকে গাড়ি ব্যাক করে কালিগঞ্জ থানায় নিয়ে আসলো। তো আমাদের আর ছাড়ল না। আমি ছিলাম ছয় মাস আঠারো দিন। জেলখানায় ছয় মাস আঠারো দিন ছিলাম। আমাদের খুব মেরেছিল আওয়ামী লীগের ছেলে গুন্ডারা। থানায় ঢুকানোর সময় আবার মারলো। প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে বড় বড় গরানের কোড়ার লাঠি দিয়ে। বাচ্চাদেরও অনেক মারল। কালিগঞ্জের অনেক ছাত্ররাও ছিল। কালিকাপুরেরও ছিল। পরের রাত্রে গাড়িসহ চালান দিল। গাড়ির নামেও মামলা। গাড়িসহ আমরা জেলখানায় ছিলাম। গাড়িরও জামিন নিতে হয়েছিল। জীবনে একবারই জেলে গেছি। পরে জেলগেট থেকে ধরে আবার ছেড়ে দেয়। এই করে। আমরা বের হতে পারি না। আবার কেস দেয় অন্য একটা মামলা দিয়ে। আবার ঢুকিয়ে রাখে।

    এরপরই মাওলানা গোলাম বারী জেলখানার ঝক্কি-ঝামেলার বর্ণনা দিয়েছেন। তার অভিজ্ঞতা ও বর্ণনার আগে আমি তাঁর একটি ছোট্ট উক্তি নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে চাই। কথাটা বলতে আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে। আমাকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। উক্তিটি হলো:

    “এখন তো জেলখাটার সময়।”
    এই ছোট্ট উক্তিটি আসলে ছোট্ট নয়- বিরাট কথা। এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে মাওলানার চিন্তাভাবনা বিশ্বাস এবং ইসলামী আন্দোলনে তাঁর স্বীকৃতি ও ত্যাগ কুরবানির নিয়তও। ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ভাবিয়ে তুলবে নিশ্চয়ই এবং বুকে সাহস যোগাবে। আমার মনে পড়তে ছিল কবিতার একটি বাক্য: এখন যৌবন যার সময় তার যুদ্ধে যাবার।

    মাওলামা গোলাম বারী মাদ্রারাসার হুজুর- তিনি সাধাবণ হুজুর নন, প্রিন্সিপাল। আমরা জানি  মাদ্রাসার হুজুররা খুব দুর্বল ও ভীরু, তারা কোনো আন্দোলনে নেই। কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেতে তারা সাহস পাননা। তাদের ঝোঁক হলো দোয়া-দরূদ এর দিকে, দাওয়াত খাবার দিকে। দাওয়াতে ভালো খাবার পাওয়ায় যায় এবং হাদিয়া পাওয়া যায়। এদিকে মাওলানা গোলাম বারীকে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। সম্পূর্ণ বিপরীত তিনি। 

    তিনি কেন এমন ব্যতিক্রম হলেন? কিসে তাঁকে এমন ব্যতিক্রম বানিয়েছে? মাওলানা ভালোভাবেই জানেন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সারাদেশকে জেলাখানা ও আয়নাঘর বানিয়েছে। সে সময়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সংগঠনের কাজে যাওয়া ছিল বিপদজনক। পুলিশের হাতে ধরা পরলেই মার খেতে হতো, জেলহাজতে ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হতো। মাওলানা গোলাম বারী এসব জেনে-বুঝে সংগঠনের এক প্রোগ্রামে যেতে প্রস্তুত হয়েছেন। এ কথা জেনে তাঁর স্ত্রী বলেছেন, এখন যাবেন তো দেশের অবস্থা ভালো না। তখন তিনি বলেছেন যদি পুলিশে ধরে এখন তো জেল খাটার সময়। আমার  কোনো টেনশন নেই।

    কতটুকু ঈমানের শক্তি থাকলে স্ত্রী-পুত্র ও সংসার ছেড়ে-ফেলে জেল-জুলুম ও নির্যাাতন সহ্য করতে নির্ভয়ে নিশ্চিন্তায় দ্বিধাহীনচিত্রে রাজী হতে পারেন! এ কথাটি নিশ্চয়ই ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মনে প্রেরণা দিবে, বুকে সাহস যোগাবে। ইসলামী আন্দোলন দুর্বল ভীরুকে সাহসী করে, বীর মুজাহিদ করে। মাওলানা গোলাম বারীকে ইসলামী আন্দোলন একজন ত্যাগী মর্দে মুজাহিদ বানিয়েছে। তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস এবং বুকের সাহস। তাঁকে মুবারকবাদ জানাচ্ছি।

    এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা তার কারাজীবনে সরস ও চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। আমার কারাগারে যাবার সৌভাগ্য হয়নি বলে তার বর্ণনাটা মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আমরা আগে জানতাম জেলহাজতখানায় চোর ডাকাত খুনি ও নানা রকম খারাপ কাজের অপরাধীদের বন্দী করে রেখে শান্তি দেয়া হয়। গুরুতর অপরাধীদের ফাঁসি দেয়া হয়। বিগত সরকারের আমলে দেখলাম যারা সৎ যোগ্য ভালো মানুষ, দেশ প্রেমিক ও মানব-কল্যাণকামী তাদের বিরুদ্ধে নানারকম মিথ্যা মামলা করে ভাড়াটে বিচারকদের দ্বারা জেলহাজতে ঢুকিয়ে নির্যাতন করে মারছে। যারা বেশি সৎ ও যোগ্য তাঁদের ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলে সারাদেশে দুর্নীতিবাজ ও শয়তানদের রাজত্ব করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

    মাওলানা গোলাম বারীর জেলের অবস্থার বর্ণনাটি সম্মানিত পাঠকদের অবগতির জন্য হুবহু এখানে তুলে ধরছি। তিনি বলেছেন:
    আমরা গ্রেফতার হলাম দুই হাজার বারো সালের ফেব্রুয়ারিতে, সেদিন বারো তারিখ। আমরা থাকাকালীন মুহাদ্দিস রবিউল বাশার সাহেবও ছিলেন। বেশি দিন থাকতে হয়নি উনার, আমাদের পরে এসেছিলেন এবং আমাদের আগেই জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে যেতে পেরেছিলেন। কারাগারের মধ্যে প্রবেশ করানোর আগে খুব কঠোরভাবে তল্লাশি করা হয়, একেবারে কোমরের ঘুনসি (বন্ধনী) পর্যন্ত তারা খুলে রেখে দেয়। সাথে কোনো টাকা থাকলেও নিয়ে নেয়, সেগুলো পিসি কার্ডে যোগ করে দেয়। পিসি কার্ড হলো কারাগারের পরিচয়পত্রের মতো; ছবিসহ নাম পরিচয় দিয়ে মামলার ধারাও তাতে লেখা থাকে। প্রথমদিন তো আদালত থেকে কারাগারে প্রিজন ভ্যান পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়; ঐদিন আর তেমন কিছুই হয় না, শুধু তল্লাশি করে আমদানি ওয়ার্ডে রেখে দেয়। ঐ ওয়ার্ড থেকে সবাইকে ভাগ করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বরাদ্দ করে দেয়া হয়। ওখানে বিভিন্ন ওয়ার্ড আছে; পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কপোতাক্ষ- এভাবে নাম দেয়া। শিক্ষিতদের জন্য, ধুমপায়ীদের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ড ভাগ করা। তবে আমরা শেষদিন পর্যন্ত আমদানিতেই ছিলাম। যাদেরকে একটু বিশিষ্ট পর্যায়ের বিবেচনা করা হয়, তাদের আমদানিতেই রাখা হতো। আর জনপ্রতিনিধি হলে তাদের জন্য ডিভিশনের ব্যবস্থা আছে। তো, সেই পিসি কার্ডের একটা অংশে টাকা পয়সার হিসাব লেখা থাকতো, কেউ বাইরে থেকে দেখা করতে এসে বা এমনিতেই আমার নামে টাকা জমা দিয়ে গেলে সেই টাকা আমার পিসি কার্ডে যোগ করে দেয়া হতো। সেই টাকা দিয়ে ওর ভিতরের দোকান থেকে তরকারি, পোল্ট্রির গোস্ত বা মাছ ঝোল কিনে খাওয়া যেতো। এছাড়াও সেই একমাত্র দোকান থেকে নাস্তাপানিও কিনে খাওয়ার সুযোগ ছিলো। তবে ওর মধ্যে নগদ টাকার প্রচলন নেই। যা করতে হবে, সবই পিসি কার্ডের ঐ টাকা দিয়ে। কেউ চুল কাটাতে চাইলেও সেই পিসি কার্ডের টাকা ব্যবহার করতে হবে।

    তো, আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন সকালে কেস টেবিলে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে আমাদের ওজন পরিমাপ, দেহের কোথায় কোথায় ক্ষতচিহ্নের দাগ আছে সেগুলো কার্ডে লিখে দেয়; পরে আবার বের হবার সময় সেগুলো মিলিয়ে দেখে। সেখানে আমার শীতকাল, গরমকাল, রমজান, স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ- সবকিছুই ওর মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে। শীতকালে স্বস্তি নিয়ে থাকা গেলেও গরমকালে টিকে থাকা খুবই মুশকিল। সেখানে কিন্তু মশারির ব্যবস্থা নেই, প্রত্যেক ওয়ার্ডে কয়েকটা করে ফ্যান দেয়া আছে কিন্তু সেগুলোর বাতাস নিচে পর্যন্ত পৌঁছায় না। আস্তে আস্তে ঘোরে এবং অনেক উপরে ঝুলানো। গরমকালে খুবই কষ্টকর সেখানকার জীবন। আল্লাহর ইচ্ছায় সেসব সময় আমরা অতিবাহিত করে এসেছি। বাইরে থেকে শোনা যায়, লোকে বলে- জেলখানার সম্বল, থালাবাটি কম্বল। আসলেই কিন্তু তাই। সেখানে একটা দস্তার থালা, একটা দস্তার বাটি এবং তিনটা কম্বল দেয়া হয়। মেঝেতে বিছানোর জন্য, পেঁচিয়ে বালিশ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং শীতে গায়ে দেয়ার জন্য- এই তিনটা কম্বল দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো খুবই নোংরা। যদিও বাইরে থেকে সেখানে বালিশ কম্বল নেয়ার সুযোগ আছে।

    সেখানে প্রতি মাসে একটা করে গায়ে দেয়ার সাবান এবং একটা করে কাপড় কাচার সাবান দেয়া হতো। আর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অল্প-সামান্য হাসপাতালের ব্যবস্থাও আছে। সেখানে ছোট্ট একটা লাইব্রেরিও আছে; তাতে হাদীস-কুরআনের কিছু বইপত্র পাওয়া যায়, মনীষীদের জীবনী, উপন্যাস, কবিতার বই-টই পাওয়া যায়। আমি সেখানে থাকতে অর্থসহ কুরআন পড়ার অনেক সময় পেয়েছিলাম, এছাড়াও অল্প সামান্য হাদীসের বইও পড়া হয়েছিলো। খাবার-দাবার ছিলো, সকালে দুইটা করে বড় লাল আটার রুটি, সাথে আঙুলে করে একটু গুড়; আর দুপুরে-রাতে বিভিন্ন সবজি জাতীয় তরকারি দিতো। তবে নানান উপলক্ষ্যে স্পেশাল খাবারও দিতো, কিন্তু তা সামান্যই। শোনা যায়, বাজেটে ঠিক পরিমাণেই আসে কিন্তু কর্তৃপক্ষ সবটুকু পৌঁছায় না। আর রমজানে সেহরিতে ঘন মশুর ডাল দিতো প্রতিদিন, আলু ভর্তাও থাকতো। এসব সাঁঝে দোকান থেকে পিসি কার্ডের টাকা দিয়ে ভিন্ন জিনিস কিনে খাওয়ার সুযোগ ছিলো। দুপুরের ভাত নেয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়াতে হতো, দস্তার থালা হাতে নিজ নিজ ওয়ার্ড বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়াতে হতো; কয়েদী মানে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা বিভিন্ন কাজ করে ওর মধ্যে; তাদেরকে দিয়েই রান্না, ভাত বণ্টন ইত্যাদি কাজ করানো হয়। তারা কাঠের ঠেলা গাড়িতে করে ভাত নিয়ে আসতো।

    ওখানে বন্দীদের বিনোদনের জন্য টেলিভিশন হিসেবে বিটিভির ব্যবস্থা ছিলো, আর সংবাদ জানার জন্য পত্রিকা থাকতো। সাধারণত যুগান্তর পত্রিকাই পাওয়া যেতো, তবে মাঝে মধ্যে জনকণ্ঠও দিতো। আর টিভিতে তখন বেশি দেখা যেতো, জাসদের হাসানুল হক ইনুকে; তখন সে খুবই সরব। হাটহাজারির শফি হুজুরের সেই বক্তব্যকে নিয়ে প্রায় একমাস ধরে সে টিভিতে বিভিন্ন বক্তব্য দিতো। ঐ যে, শফি হুজুর মেয়েদেরকে তেতুলের মতো বলেছিলেন, সেজন্য হুজুরকে তারা তেতুল হুজুর বলে ডাকতো তখন। এখন ইনুর সেই জায়গা দখল করেছে হাসান মাহমুদ; দুজনের নামের মিলও আছে!

    সকাল ০৮টা কি ০৭:৩০ টার দিকে ওয়ার্ডের দরোজা খুলে দিতো আর আসরের নামাজের কিছুক্ষণ আগে আবার দরোজা বন্ধ করতো। সারাদিন-রাতে কয়েকবার গণনা হয়; গণনার জন্য গার্ড আসে। তখন ফাইলে লাইন দিয়ে মেঝেতে বসতে হয়। সকাল, বিকাল এবং রাতে- এই তিনবার গোনে। শুধুমাত্র যোহরের নামাজ আমরা মাঠে পড়তাম বাইরে; সেখানে অনেক লোকের সমাগম হতো। জুমার দিনে জেলার সাহেব আমাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছিলেন- বাংলায় যেনো খুৎবা না দেয়া হয়। এটা সরকারি জায়গা, এখানে খুৎবায় উত্তেজনামূলক কথা বলা যাবে না। আর বাকি চার ওয়াক্ত নামাজ আমরা কোঠার মধ্যে আদায় করতাম।

    এখন তো বন্দীদের মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়, আগে এই সুবিধা ছিলো না। দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা ছিলো দুই রকমের- মাছি কল আর বিশেষ কল। দেখা করতে এলে গেটের সামনে থেকে মাইকে ডাকার জন্য লোক আছে, তারা নাম ধরে ডাকে আর তাতে বলে দেয়- কে কার সাথে দেখা করতে এসেছে এবং তার পিতার নাম কী, কোন থানা এসব। মাছি কল মানে, অনেক লোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গ্রিলের দুই পাশে দুই তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলবে। এক সাথে অনেক লোক কথা বলে, সেজন্য চিল্লিয়ে কথা বলতে হয়, তা না হলে ওপাশ থেকে বুঝতে পারবেনা- সেজন্য এই সাক্ষাতকে মাছি কল বলে। আর স্পেশাল ভাবে একটা ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য সামনাসামনি বসে কথা বলা যায়; তার জন্য বেশি টাকা দিয়ে আবেদন করা লাগে। তো, একবার আমার মেয়ে মনিরা দেখা করতে গেলো, ওর মেয়ে তখন খুব ছোট; দেখা করে যখন চলে যাবে, তখন সে মোটে ওখান থেকে নড়বে না। অনেক কান্নাকাটি করেছিলো। সে চাচ্ছিলো নানার সাথে আমোদ করবে, খেলা করবে। কিন্তু সে তো জানে না আমি বন্দী অবস্থায় ওখানে আছি। ঐ সময়টা আমার জন্য খুব কষ্টের মুহূর্ত ছিলো। আমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সবর করার তাওফিক দিয়েছেন। এভাবে আমাদের সময় কেটেছে তার মধ্যে।

    একবার আমাদেরকে আদালতে তোলা হলো, জামিনও হয়ে গেলো; কিন্তু জামিনের কথা শুনে কাঠগড়ার সবাই একসাথে জোরে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। তাতেই নাকি আদালতের নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে। জামিন দিলো বাতিল করে। আসলে তাদের ওপর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো, যাতে আমাদেরকে যেকোনো কারণ দেখিয়ে পুনরায় ওর ভিতরে রাখা যায়। জামিন হয় আবার অন্য একটা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বের হওয়া পিছিয়ে যায়। আমাদেরকে যেদিন আদালতে উঠানো হতো, সেদিন অনেকেই দেখা করতে যেতেন সেখানে। কিন্তু সেটা আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল।

    এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা সাহেব বলেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অনুভব ছিল এ রকম যে, ৬৩ বছর এটা সুন্নত বছর, এর চেয়ে বেশি নিয়ত করে থাকাটা ঠিক না।’ এ কথায় আমার মনে খটকা লেগেছে। হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। হায়াত মউতের সুন্নত আছে নাকি? কোনো কোনো সাহাবী তো শতাধিক বছর বেঁচেছিলেন। পরে তিনি বলেছেন 'আমার বয়স এখন ৬৫ বছর। তার কথার ভাবে মনে হচ্ছে, ৬৩ বছর থেকে দু’বছরের বেশি বেঁচে থাকায় তাঁর মনে কষ্ট লাগছে। এমন মনে না করে বেশি বছর বেঁচে থাকার জন্য তাঁর তো আরও বেশি বেশি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং আরো ভালো ভালো কাজ করা উচিত।

    যাক, গ্রন্থটির আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে উল্লেখ করার মতো। আলোচনা দীর্য হওয়ার ভয়ে তা করা গেলো না। আলাপে সংলাপে এর প্রশ্ন ও উত্তরগুলোর ভাষা আলাপচারিতার ঢঙেই হয়েছে। তারপরও বলতে হয় কোনো কোনো প্রশ্নের মধ্যে কিছুটা জড়তা লক্ষ্য করা যায়। আরেকটি বিষয় হলো এটি একটি গ্রন্থ, সংবাদপত্র নয়। এ গ্রন্থ যুগ যুগ টিকে থাকবে এবং উচ্চশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত সকল শ্রেণির পাঠক পাঠ করলেন।

    সকল পাঠক গ্রন্থ থেকে শুধু তথ্য ও ইতিহাস জানতে চান না। তার সাথে জানতে চান তথ্য ও ইতিহাস পরিবেশনের মান ও স্টাইল। যার উপর গ্রন্থের মূল্য ও মর্যাদা অনেক নির্ভর করে। যেদিকটা বিবেচনা করলে কারো কারো কাছে মন ভরবে না।
    মাওলানা গোলাম বারী মাদরাসার সুদক্ষ উস্তাদ এবং ইসলামী আন্দোলনের একজন মর্দে মুজাহিদ। তিনি সাহিত্যিক নন। তাঁর কাছ থেকে সাহিত্যমানের ভাষা আশা করা ঠিক হবে না। সম্পাদক সাহেব যদি মাওলানার ভাষার প্রকাশভঙ্গি ঠিক রেখেই বিন্যাসে একটু সচেতন হতেন তবে আরো ভালে এবং আরো সুন্দর হতো।

    গ্রন্থের প্রথম পৃষ্ঠায় মাওলানা গোলাম বারীর পূর্ণাঙ্গ ছবি গ্রন্থটির আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে। গ্রন্থের শেষে রয়েছে রঙিন দৃষ্টিনন্দন অ্যালবাম। একেকটি ছবি তথ্য ও ইতিহাস ধারণ করে আছে। একটি ছবিতে জয়নগর আমিনিয়া হামিদিয়া মাদ্রাসার প্রধান ফটকের সামনে আলাপে সংলাপের সম্পাদক ও প্রকাশককে মাঝখানে প্রিন্সিপাল মাওলানা গোলাম বারী সাহেবকে দেখা যাচ্ছে। গ্রন্থের তৃতীয় কভারে সম্পাদকের দৃষ্টিনন্দন ছবিসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় রয়েছে। এর মাধ্যমে তার অন্যান্য সাহিত্যকর্মের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। 

    আলাপে সংলাপের প্রচ্ছদ কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই উন্নতমানের। পাঠকগণ এমন সুন্দর গ্রন্থটি দেখলেই আদর করে হাতে তুলে নেবেন নিশ্চয়ই এবং এটি ইসলামী আান্দোলনের কর্মীদের বুকে সাহস ও উৎসাহ জাগাবে নিঃসন্দেহে।
    মাওলানা গোলাম বারীর কথাটি- ‘এখন জেল খাটার সময়’ এই সাহসী ও উৎসাহের উক্তি তরুণ কর্মীদের হৃদয়ে প্রচুর শক্তি যোগাবে। তারা নিশ্চিন্তে দ্বিধাহীন চিত্তে আন্দোলনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। গ্রন্থটির বহুল প্রচার প্রয়োজন। এমন একটি গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সম্পাদক ও প্রকাশককে অনেক অনেক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
     
     এক নজরে আলাপে সংলাপে
    আলাপে সংলাপে: মাওলানা এ ইউ এম গোলাম বারী, জাকির হুসাইন সম্পাদিত, বিষয় :  সাক্ষাৎকার, সাইজ:  বুক সাইজ, ফর্মা- ৭.২৫, প্রচ্ছদ: হাশেম আলী, মূল্য: ৩০০ টাকা, প্রকাশনা: আবীর প্রকাশন, ঢাকা। প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৪।
     


    বাঁধনহারা’র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে সাহিত্য সম্মেলন ও ৫ম সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫ খুলনা

    বাঁধনহারা’র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে সাহিত্য সম্মেলন ও ৫ম সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫

    কবি মুকুল চৌধুরীর ইন্তেকাল সারাদেশ

    কবি মুকুল চৌধুরীর ইন্তেকাল

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব কাল সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাংস্কৃতিক উৎসব কাল

    রোযা ও মাহে রমযানে অবহেলিত আমল প্রবন্ধ

    রোযা ও মাহে রমযানে অবহেলিত আমল

    আলাপে সংলাপে: মাওলানা গোলাম বারী সাক্ষাৎকারের যত কথা রিভিউ

    আলাপে সংলাপে: মাওলানা গোলাম বারী সাক্ষাৎকারের যত কথা

    বগুড়ায় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি সম্মেলন ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত রাজশাহী

    বগুড়ায় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি সম্মেলন ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

    জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে জাগরুক রাখতে কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা প্রয়োজন ঢাকা

    জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে জাগরুক রাখতে কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা প্রয়োজন

    গাজীপুর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ-এর সাংস্কৃতিক কর্মী সম্মেলন ঢাকা

    গাজীপুর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ-এর সাংস্কৃতিক কর্মী সম্মেলন

    শহীদ সিরাজীর নতুন বই ‘মক্কা থেকে মদিনায়’ বইমেলা

    শহীদ সিরাজীর নতুন বই ‘মক্কা থেকে মদিনায়’