১২ অগাস্ট, ২০২৪ ০৯:৪৭ এএম
তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর
এসো গাই আল্লাহ নামের গান
রাসুল আমার ভালবাসা
এলো কে কাবার ধারে
সে কোন বন্ধু বলো
পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়
টিক টিক টিক টিক যে ঘড়িটা
আম্মা বলেন ঘর ছেড়ে তুই
এ আকাশ মেঘে ঢাকা রবে না
কথায় কাজে মিল দাও আমার
আয় কে যাবি সঙ্গে আমার
এমন সব কালজয়ী গানের গীতিকার কিংবদন্তি কবি মতিউর রহমান মল্লিক। আজ ১২-ই আগস্ট খ্যাতিমান এ গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও সংগঠকের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালে এইদিন দিবাগত রাত ১২:৪৫ মিনিটে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৫৪ সালের পহেলা মার্চ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি কায়েম উদ্দিন মল্লিক স্থানীয় জারীগানের দলে গান লিখতেন। মাতা আয়েশা বেগম। পিতা মাতার সান্নিধ্যে থেকে তিনি গানের প্রাথমিক জীবন শুরু করেন। প্রাথমিক জীবনে রেডিওতে গান শুনে শুনে গান লেখা শুরু করেন। তখনকার তার প্রায় সকল গানই ছিল প্রেমের গান। পরবর্তীতে ইসলামী আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ইসলামী ধারায় গান লেখা শুরু করেন।
কবি মল্লিক বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন: কর্মজীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনও সম্পাদনা করেছেন, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
সাংস্কৃতিক জীবন: মতিউর রহমান মল্লিক একজন নিখাদ সাংস্কৃতিক সংগঠক। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। তারপর একে একে তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের শহর, নগর, গ্রাম, গঞ্জ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় গড়ে ওঠে একই ধারার অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন।
প্রকাশিত গ্রন্থ: প্রচার বিমুখ এ ব্যক্তিটি কাজ করেছেন মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, বিশ্বাসের জন্য। ছোট বড় সবার জন্য লিখেছেন তিনি।
কাব্যগ্রন্থ: আবর্তিত তৃণলতা, অনবরত বৃক্ষের গান, তোমার ভাষায় তীক্ষ ছোরা, চিত্রল প্রজাপতি, নিষন্ন পাখির নীড়ে
ছড়াগ্রন্থ: রঙিন মেঘের পালকি ও আসলো একুশ আসবে একুশ
গীতিকাব্য: ঝংকার, যতো গান গেয়েছি ও প্রাণের ভেতর প্রাণ
প্রবন্ধগ্রন্থ: নির্বাচিত প্রবন্ধ এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে কবি ও কবিতা
অনুবাদক হিসেবে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পাহাড়ি এক লড়াকু নামে আফগান মুজাহিদদের অমর কীর্তিকলাপ তার বিখ্যাত অনুবাদ উপন্যাস। মহানায়ক (উপন্যাস) ছাড়াও হযরত আলী ও আল্লামা ইকবালের মতো বিশ্বখ্যাত মুসলিম কবিদের কবিতাও অনুবাদ করেছেন তিনি।
তার সকল সাহিত্য কর্মের সংকলন নিয়ে ২৫০০ পৃষ্ঠার ৬ খন্ডে কবি মতিউর রহমান মল্লিক রচনাবলী প্রকাশিত হতে যাচ্ছে খুব শিগগিরই। সেখানে স্থান পাচ্ছে ১৪টি প্রকাশিত ও ৩০টি অপ্রকাশিত মোট ৪৪টি পাণ্ডুলিপি। স্বনামধন্য দেশজ প্রকাশন থেকে এ রচনাবলী প্রকাশিত হচ্ছে।
স্বীকৃতি
সাহিত্যকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবি মতিউর রহমানের প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা হলো;
সাহিত্য পুরস্কার : সবুজ-মিতালী সংঘ, বাগেরহাট
স্বর্ণপদক : জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা
সাহিত্য পদক : কলমসেনা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা
সাহিত্য পদক : লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদ
সাহিত্য পদক : রাঙামাটি সাহিত্য পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম
সাহিত্য পদক : খানজাহান আলী শিল্পীগোষ্ঠী, বাগেরহাট
সাহিত্য পদক : সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ
সাহিত্য পুরস্কার : সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ, বাগেরহাট
প্যারিস সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ফ্রান্স
বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার : বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম
ইসলামী সংস্কৃতি পুরস্কার : ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম
সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য পরিষদ, ফ্রান্স।
কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার।
কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে মহান রবের কাছে তার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।