মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
, ১০ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
শিরোনাম :
  • বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন ভাষা সৈনিক সাংবাদিক আবদুল গফুরের মৃত্যুতে দেশীয়র শোক ভাষা সৈনিক সাংবাদিক আবদুল গফুরের মৃত্যুতে দেশীয়র শোক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের শোক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের শোক
  • সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে মহানবীর অবদান

    ড. খ ম আব্দুর রাজ্জাক

    ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৯:৪৮ এএম

    সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে মহানবীর অবদান

    ভুমিকা:

    সংস্কৃতির মূল কথা হলো সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা। নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে গিয়ে মানুষ কখনো কখনো অন্যের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়।সাময়িক আনন্দ উল্লাস করতে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। তাই এরুপ আনন্দ উল্লাশ ও চিত্তবিনোদনকে কেউ কেউ সংস্কৃতি বললেও প্রকৃত অর্থে তা অসুস্থ সংস্কৃতি। নিজের সুখ-সৌন্দর্য ও কল্যাণের পাশাপাশি অপরের বিষয়টি বিবেচেনায় রাখাও সুস্থ সংস্কৃতির কাজ।আমরা জানি, সকল মানুষের মঙ্গলামঙ্গলের প্রতি সূক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে একমাত্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থায়। সকল শ্রেণির মানুষের অধিবারের গ্যারান্টি দেয় ইসলাম। এ জীবন ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ, ধনি-গরীব, সাদা-কালো, উচু-নিচু সকলের সমান অধীকার রয়েছে। তাই কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলাম অনুমোদিত, ইসলামী শরীয়াত নির্দেশিত মুসলিম জাতির জীবনাচারই হলো ইসলামী সংস্কৃতিই এবং মহানবী মুহাম্মাদ স. ছিলেন সেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সফল মহানায়ক। ইসলামী সংস্কৃতিকেই সুস্থ সংস্কৃতি হিসেবে বিচেনা করে সে আলোকেই নিম্নে আলোকপাত করা হলো।

    সংস্কৃতি কী:

    সংস্কৃতি শব্দের উৎপত্তি সংস্কার থেকে। সংস্কার অর্থ বিশুদ্ধীকরণ। সংস্কৃতির আরবি প্রতিশব্দ ‘সাকাফাহ’অর্থ শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ পাওয়া, পরিশীলিত, মার্জিত, সজ্জিত রুচিসমৃদ্ধ হওয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে সংস্কৃতির ইংরেজি রূপ হল Culture. Culture এর অর্থ হচ্ছে কর্ষণ করা। জমিকে যেমন কর্ষণ করে মসৃণ ও উৎপাদন উপযোগী করা হয় তেমনি সদাচার ও ধার্মিকতার অনুশীলনের মাধ্যমে যখন ব্যক্তি বা জাতি পরিশীলিত হয়ে ওঠে, তখনই তাকে Cultured man বা Cultured nation বলা হয়।

    সংস্কৃতির সংজ্ঞা:

    সংস্কৃতির গ্রহণযোগ সংজ্ঞা দিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী E.B. Tylor. তাঁর মতে, ”Culture is that complex whole which includes knowledge, belief, art, moral, law, custom and any habits acquired by man as a member of society.” অর্থাৎ ‘‘সংস্কৃতি হচ্ছে সেই সমষ্টি যা সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন, রীতিনীতি এবং অন্য যে কোন দক্ষতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টি।” 

    মানুষের কাজ-আচরণ শুধু নয় তার ব্যবহারের জিনিষ-পত্রকেও সংস্কৃতির আওতায় আনা হয়েছে। সুতরাং সংস্কৃতি এতো ব্যাপক একটি ব্যাপার যে, একে মানুষের সামগ্রিক পরিশীলিত কর্মকান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে সমগ্র বিশ্বে, সমগ্র পর্যায়ে।

    অথচ আজ সংস্কৃতি শব্দটি উচ্চারিত হলেই আমাদের মানসপটে এক সংকীর্ণ কর্মকান্ডের কথা বার বার ভেসে আসে। সংস্কৃতিকর্মী বলতে আমরা আজকাল বুঝি বিনোদনমুলক নাটক, সিনেমা ও গান। মনে রাখতে হবে, এগুলো সামগ্রিক সংস্কৃতির একটি ক্ষুদ্র অঙ্গ মাত্র।

    অপসংস্কৃতি:

    শিক্ষা-সভ্যতা, রুচি ইত্যাদির অবনতি বা বিকৃতিই হলো অপসংস্কৃতি। চিত্তবিনোদনের নামে সাময়িক আনন্দ উল্লাস করে যে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, পরবর্তিতে যা ক্ষতি ও কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায় এরুপ কোনো কাজকে কেউ কেউ সংস্কৃতি বললেও প্রকৃত অর্থে তা অপসংস্কৃতি বা অসুস্থ সংস্কৃতি।

    সুস্থ সংস্কৃতি কী

    অপসংস্কৃতি বা অসুস্থ সংস্কৃতির উল্টোটাই সুস্থ সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নৈতিক অধঃপতনের দিকে ধাবিত করে না; বরঞ্চ পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা আর সহযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করে তাকে সুস্থ সংস্কৃতি বলে। সুস্থ সংস্কৃতি হলো মানব মনের সুকোমল অভিব্যক্তি। সর্বপরি ইসলামী সংস্কৃ্তিই হলো-সুস্থ সংস্কৃতি।

    সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় মহানবীর প্রেরণা

    মানবজাতির মধ্যে পরম বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন মানুষ হচ্ছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ছিলেন এক নয়া সংস্কৃতির নির্মাতা। শুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতার এক দুর্লভ মহিমায় বিভূষিত। অথচ তার সমাজ ও সময়,  তার যুগ ও প্রতিবেশ ছিল পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। ঈসা (আ.)কে আসমানে তুলে নেওয়ার পর থেকে তার নবুয়ত প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত কয়েক শতাব্দি মানব সমাজ নিষ্পিষ্ট ছিল পঙ্কিলতা, নির্মমতা, অস্বচ্ছতা, অসততা, অসাধুতা, পৌত্তলিকতা ও পেশিশক্তিমত্তার এক অসহনীয় অনাচার ও দুর্বৃত্তপরায়ণতায়। মুহাম্মদ (স)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবসহ গোটা বিশ্ব ছিল জাহিলিয়াতের গর্ভে নিমজ্জিত। খ্রিষ্টিয় ষষ্ঠ শতাব্দীর কিছু পূর্বে বা ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরু হতে সমস্ত পৃথিবীই অজ্ঞতার চরম সীমায় পৌঁছেছিল। আরব ভূখণ্ডেও এ অজ্ঞতা কুসংস্কারের সয়লাব বয়ে গিয়েছিল। আইন-কানুন নিয়ম-শৃংখলা, নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই ছিল না। ঝগড়া-বিবাদ মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। লজ্জাহীনতা, বেহায়পনা ও অশ্লীলতায় সমাজ ভেসে গিয়েছিল।বিভিন্ন পাপাচার, ব্যভিচার, দুর্নীতি, কুসংস্কার, অনাচার, অরাজকতা, ঘৃণ্য আচার-অনুষ্ঠান ও নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডে কলুষিত হয়ে পড়েছিল সমাজ। প্রাক-ইসলামী যুগের আরবগণ মাদকাসক্তিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিল। ঐতিহাসিক খোদা বকসের ভাষায়ঃ War, women and wine were there observing passions of the Arabs. অর্থাৎ যুদ্ধ, নারী ও মদ নিয়ে তারা সর্বদা লিপ্ত থাকতো।

    এমনি যুগসন্ধিক্ষণে মহানবীর আগমন ঘটে। ভাষার শুদ্ধতা, সাংস্কৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও মানসিক ঔজ্জ্বল্যে তিনি ছিলেন এক মহিমান্বিত মানুষ। এক প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, সুচিবেচক, ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ মানুষ। সাহিত্য-সংস্কৃতির মতো জীবনবোধে নিবিষ্ট ও মানুষের সহজাত এবং আত্মলগ্ন জীবনাচরণের সমন্বয়ক উপাদান দুটিও তার স্পর্শে পল্লবিত হয়েছে।

    সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার উৎপত্তি ও বিকাশ:

    জীবন চর্চাই সংস্কৃতি। আর জীবন যেহেতু গতিশীল তাই সংস্কৃতিও সবসময় গতিশীল। জীবনের শুরু যেখান থেকে সংস্কৃতির সূচনা বিন্দুও সেখানেই। পৃথিবীতে মানুষের প্রথম জীবন চর্চা যেহেতু মহান আল্লাহর হিদায়াত ও আনুগত্য দিয়েই শুরু। তাই এ প্রথম জীবন চর্চাই ছিল ইসলামী সংস্কৃতির সূতিকাগার। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই এ কথা বলা যায় যে, আদম আ. এর দ্বারাই ইসলামী সংস্কৃতির গোড়াপত্তন হয়। বহু যুগ ও শতাব্দীর পরিক্রমায় তা বারবার মেঘের আড়ালে ঢেকে গেছে এবং যুগে যুগে নবী রাসূলগণ তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। শেষ নবী মুহাম্মদ স. এর যুগে এসে ফুলেফলে তার পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। নবী করীম স. বলেছেন: উন্নত সংস্কৃতি জীবনধারাকে পূর্ণতাদান করার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। (ইবন মাজাহ)

    অনুসদ্ধিৎসু দৃষ্টিতে অবলোকন করলে লক্ষ্য করা যায় যে, তাঁর মধ্যে আদম আ. এর মহত্ত্ব, নূহ আ. এর প্রচারনিষ্ঠা, সালেহ আ. এর বিনীত প্রার্থনা, ইবরাহীম আ. এর একত্ববাদ, ইসমাঈল আ. এর আত্মত্যাগ, মূসা আ. এর পৌরুষ, হারুন আ. এর কোমলতা, ইউসুফ আ. এর সৌন্দর্য, ইয়াকুব আ. এর ধৈর্য, আইউব আ. এর সহনশীলতা, দাউদ আ. এর সাহসিকতা, সুলায়মান আ. এর বিচারজ্ঞান ও ঐশ্বর্য, ইয়াহইয়া আ. এর সরলতা, ইউনুস আ. এর অনুশোচনা, ঈসা আ. এর অমায়িকতা ইত্যাদি সকল সুমহান গুণের পূর্ণ সমন্বয় ঘটেছিল। তাঁর প্রচারিত দ্বীনে যেমন সকল দ্বীনের সার-সংস্কৃত হয়ে বিকাশ লাভ করেছে, তেমনি তাঁর জীবন বিকাশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে সকল প্রেরিত পুরুষের চারিত্রিক-বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে। তাই বলা হয়, তাঁর প্রচারিত আদর্শই মানব জাতির জন্য পূর্ণ আদর্শ।(ড. কাজী দীন মুহম্মদ, প্রাগুপ্ত, পৃ. ৫৬-৫৭)

    কুরআন মজীদে বলা হয়েছে: নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।(আল-কুরআন, সূরা আল- আহযাব: ২১)

    একজন সংস্কৃতিবান মানুষের যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন শৈশব থেকেই মহানবী সা. এর মধ্যে তা বিদ্যমান ছিল। সুস্থ সংস্কৃতির ছাপ তার আচড়নে লক্ষ্য করা যায়।

    একটি রিওয়াতে আছে যে, মদীনায় একদিন রাসূলুল্লাহ সা. পথ হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, সামনে রাস্তার পাশে একটি খেজুর গাছের আড়ালে একটি হাত বেরিয়ে এসেছে। তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন ‘এ হাতটি কার- পুরুষের না মহিলার?’ খেজুর গাছের আড়াল থেকে উত্তর এলো, ‘মহিলার। রাসূলুল্লাহ স. তখন মন্তব্য মন্তব্য করলেন, ‘মহিলার হাত-তা হলে মেহিদী নেই কেন? এ কাহিনীতে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা. কেমন সৌন্দর্যপ্রিয় ছিলেন। আরবের প্রতিটি মানুষকে তিনি একই সঙ্গে বিশ্বাসে এবং সৌন্দর্য চেতনার উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।(প্রাগুপ্তত্ত, পৃ. ৫৩)

    সংস্কৃতির নান্দনীক প্রকাশ ঘটে মানুষের আচরণে। প্রাত্যহিক কর্মব্যবস্থাপনায়, পোশাক পরিচ্ছদে, পর্যটনে এবং পরিচ্ছন্ন ইচ্ছার বিকাশে। শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে শুদ্ধতা এবং পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সংশয়মুক্ততা প্রকাশ পেয়েছিল। তার চর্চিত সুস্থ সংস্কৃতির কিছু নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

    সাহিত্য চর্চা এবং পৃষ্ঠপোষকতা:

    মহানবী নিরক্ষর ছিলেন সত্য, কিন্তু জ্ঞানের জগতে ছিলেন এক প্রতিদ্বন্দ্বীহীন বিশাল সম্রাট। কি মেধায়, কি মননে, কি ভাষায়, কি আচরণে, তার সমকক্ষ তো দূরের কথা, তার চৌহুদ্দির সীমানা স্পর্শ করার মত মানুষ পৃথিবীতে কোনদিন আসে নাই, দূর বা অদূর ভবিষ্যতে আশার সম্ভাবনাও জিরো।মানবতার এই মহান শিক্ষক ছিলেন সর্বদা সত্য ও সুন্দরের আহ্বায়ক। তিনি নিজে ছিলেন সুন্দর, তাই সুন্দরকে আঁকড়ে ধরেছেন সযত্নে। যেখানে সুন্দরের আনাগোনা সেখানেই তার পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মত। এই প্রেক্ষিতে কাব্য এবং সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা তার এক অনন্য সৃজনশীল রুচির পরিচয় বহন করে। কারণ সাহিত্য মানুষের সৃজনী প্রতিভার সরব প্রকাশ। ভাব যখন ভাষা পায়, তখনি তা সাহিত্য হয়ে উঠে আসে।

    প্রতিভার এই বিকাশ এবং প্রকাশ সাহিত্যের নানা মাধ্যমে হতে পারে। কি গদ্য, কি পদ্য, উভয়ই হতে পারে। অবশ্য পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষার সাহিত্যই কবিতা তথা কাব্যকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে। আরবী সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। আর নয় বলেই রাসূল (সাঃ) এর উত্থানের সময়কালে আরবে কাব্য ধারাটি ছিল প্রবল। তাদের কাব্যের প্রধান বিষয় ছিল যুদ্ধের পায়তারা, অশ্লীলতা, কাম, ক্রোধ, সম্পদ লুণ্ঠন, অন্যের বিরুদ্ধে উস্কানী, গোলযোগ সৃষ্টি, বিপদে ফেলা ইত্যাদি যাবতীয় অরুচি এবং অকল্যাণকর বিষয়।

    বিশেষ করে আরবী সাহিত্যের রগরগে যৌনতাপূর্ণ কবিতায় যখন আরবের কাব্য বাজার রমরমা, যুবসমাজ নোংরামীর সয়লাবে প্লাবিত, তখনই মহাকল্যাণের মহানায়ক রাসূলে করিম (সাঃ) এর আর্বিভাব।

    রাসূল (সাঃ) এর পাশে বেশ কিছু ঈমানদার, সুরুচিপূর্ণ, সুস্থ্য বিবেক এবং মস্তিষ্কের অধিকারী কিছু সংখ্যক বড় মাপের কবি দাঁড়িয়ে যান। তাদের মধ্যে কবি হাস্সান বিন ছাবিত ছিলেন অন্যতম। যাকে বলা হতো রাসূল (সাঃ) এর সভাকবি। মহানবী (সাঃ) যখন গভীরভাবে উপলদ্ধি করলেন যে, জাহেলী যুগের ঐ সব কবিদের মোকাবেলা একমাত্র কবিতা দিয়েই করা সম্ভব, তখনই তিনি কাব্য এবং সাহিত্য চর্চার প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে শুরু করেন। তবে শর্ত যে, সেই সব কবিকে রুচিবান এবং বিশ্বাসী গোত্রভূক্ত হওয়া একান্ত আবশ্যক।

    রাসূল (সাঃ) তার সাহাবী কবিদের অত্যন্ত ভালবাসতেন। অনেক কবিই তার স্নেহে সিক্ত হয়েছেন, ধন্য হয়েছেন। উকাজ মেলার কবি ও কবিতার লড়াই তিনি স্বচক্ষে স্বশরীরে প্রত্যক্ষ করেছেন। কবিদের ভাষার লালিত্য আর বিষয় উপস্থাপনের কৌশল তাঁকে মুগ্ধ করতো। জাহেলী যুগের সবচেয়ে বড় কবি ছিলেন ইমরাউল কায়েস। রাসুল তার কুরুচিপূর্ণ কবিতাগুলো খুবই অপছন্দ করতেন, কিন্তু তার ভাষা এবং কাব্যশৈলীর ব্যাপারে ছিলেন স্বপ্রশংস। কবি এবং কবিতার প্রতি মমত্ববোধ একজন কাব্য বোদ্ধা হিসেবে তার অবস্থানকে দৃঢ় করেছে। তাই তিনি প্রায়ই বলতেন “তোমরা সন্তানদের কবিতা শেখাও, এতে তাদের জবান মিষ্টি ও সুরেলা হবে”।

    কবিতার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসুল স. বলেন: “কোন কোন কবিতা প্রজ্ঞাপূর্ণ।”আবু দাউদ ৫০১০।

    রাসূল (সা.) কবি সাহাবি লাবিদের প্রশংসায় বলেন, যার কবিতা সবচেয়ে সত্য কথা বলে তা হলো লবীদের কবিতা ‘আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই বাতিল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৪৫৭৭)

    আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরাতুল কাযা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করেন তখন ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) তাঁর সামনে চলছেন এবং বলছেনঃ “হে কাফির সন্তানরা! তাঁর চলার পথ ছেড়ে দাও। আজ তাঁকে বাধা দিলে তোমাদেরকে এমন শায়েস্তা করব যে, কাঁধ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং বন্ধুর কথা ভুলে যাবে। উমার (রাঃ) তাকে বললেন, ইবনে রওয়াহা! আল্লাহর হারাম শরীফে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে কবিতা আবৃত্তি করছ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উমার! তাকে বলতে দাও। কারণ, তার কবিতা ওদের জন্য তীরের আঘাতের চেয়েও অধিক কার্যকর।” সুনানে নাসাঈ, হা/২৮৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০৪।

    নবুওয়তি দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাহাবি-কবিদের কবিতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেন। তাদের কবিতা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তাদের কবিতার শুদ্ধতার প্রতি নজর রাখতেন। তাদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কৃত করতেন।

    তিনি কাব্য ও সাহিত্য চর্চাকে এত বেশী সমর্থন এবং সাহায্য সহযোগিতা করতেন যে, সাহাবী কবি হাস্সান বিন ছাবিতকে তার সভা কবি হিসেবে ঘোষনা করেন। তাঁকে বলা হতো ‘শায়েরুর রাসুল’ বা রাসুলের কবি। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, হাসসান ইবনে সাবিত (রা.) কবিতা আবৃত্তি শুরু করলে কবিকে উৎসাহিত করার জন্য কখনো কখনো নবীজি সবাইকে শুনিয়ে বলতেন, ‘হাসসানের জিব যত দিন রাসুলুল্লাহর পক্ষ হয়ে কবিতার বাণী শুনিয়ে যাবে, তত দিন তাঁর সঙ্গে জিবরাঈল (আ.) থাকবেন।’

    কবিতা লেখার পুরস্কার হিসেবে হাসসান বিন সাবিত (রা.) জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। হাসসান বিন সাবিত (রা.)-এর কবিতা শুনে রাসুল (সা.) ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘হে হাসসান, আল্লাহর কাছ থেকে তোমার জন্য পুরস্কার রয়েছে জান্নাত।’

    তিরমিজি শরিফে এসেছে, হাসসান ইবনে সাবিত (রা.)-এর জন্য রাসুল (সা.) মসজিদে নববীতে একটি মিম্বার স্থাপন করেছিলেন। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে কাফিরদের নিন্দাসূচক কবিতার উত্তর দিতেন। রাসুল (সা.) তাঁর কবিতা শুনে বলতেন, ‘আমার পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ, রুহুল কুদুস (জিবরাঈল)-কে দিয়ে হাসসানকে সাহায্য করো।’

    সাহিত্য এবং কাব্য চর্চার দ্বার অবারিত করার জন্য তিনি সাহাবী কবিদের পুরস্কৃত করতেন। তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে সাহার্য্যর প্রার্থনা করতেন। কবি কাব রাসূল (সাঃ) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রচনা করেন তার প্রসংশাসূচক কবিতা “বানাদ সুআদ” যা ছিল নিম্নরূপ:

    ইন্নার রাসুলা লা নুরুন ইয়াসতাদাবিহী

    মুহান্নাদ মিন সুয়াফিল্লাহি মাসলুলু”

    এতে রাসূল অত্যন্ত খুশি হয়ে কাব কে তার শরীরের গন্ধ মিশ্রিত চাদর উপহার দেন। যা কাবের জীবনে এক অন্যন্য পাওয়া। অপর সাহাবী কবি আব্দুল্লাহ ইব্নে রাওয়াহাকে করেছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

    *রাসূল (সাঃ) নিজেও একটি কবিতার ছত্র রচনা করেন। যা তিনি যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে আবৃত্তি করতেন:

    “ আমি নবী, মিথ্যা নয়,

    আমি আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান।”

    *প্রখ্যাত মহিলা কবি খানসা (রা:) এর কবিতা রাসুল স. খুব পছন্দ করতেন। মাঝে মধ্যে তিনি তার কবিতা শুনতে চাইতেন…[থাযানাহ আল আদাব ১/৪৩৪]

    *আপনারা শুনে বিস্মিত হবেন যে, উমাইয়া ইবনে আবিস সালত এর মতো একজন জাহেলি যুগের কবির কবিতাও রাসুল শুনেছেন। তার কবিতায় ছিল সুস্থধারার সংস্কৃতির অংশ, উত্তম কথামালা।

    কাব্যের প্রতি এরুপ পৃষ্ঠপোষকতা করার সুবাদে এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তাদের কবিতার বিষয় হয়ে ওঠেন। তার সৌন্দর্যমণ্ডিত জীবন, স্নেহসিক্ত ও দয়ার্দ্র হৃদয়, মানুষের ও মানবতার প্রতি তার অকৃত্রিম ও অভাবনীয় ভালোবাসা সাহাবি-কবিদেরও বিমুগ্ধ করে। তারা কবিতার ভাষায় জীবনের নানা দিক উচ্চকিত করে তোলেন।

    নবীজির হাস্য রসিকতা

    বিনোদন, গল্প, চুটকি, রসিকতা, হাস্যরসবোধ মানুষের জন্মগত। মানুষমাত্রই কমবেশি সবাই রসিকতা করে।তবে এর কোনোটা মিথ্যা আর কোনোটা সত্য। আমরা অনেকেই হয়তো জানি, মহানবী ছিলেন গুরুগম্ভীর প্রকৃতির। এ ধারণা ভুল। কাঠখোট্টা ছিলো না তার জীবনযাপন। প্রিয় নবী (সা.) নিজেও এমন হাস্য-রসিকতায় অংশ নিয়েছেন। তবে তা ছিল বাস্তবভিত্তিক, মিথ্যাশ্রিত নয়। নিজ পরিবার ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর সঙ্গে উত্তম ব্যবহারসহ বাস্তবভিত্তিক হাসি-ঠাট্টাও করতেন মাঝেমধ্যে। তাঁর কিছু রসালাপ ও আনন্দঘন মুহূর্তের কথা তুলে ধরা হলো:  

    *আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, একবার এক ব্যক্তি এসে নবী কারিম (সা.) এর কাছে একটা উট(বাহনজন্তু) চাইল। রাসুল (সা.) বললেন, হাঁ, আমরা তোমাকে একটা উটনীর বাচ্চা দেব।  লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? রাসুল (সা.) বললেন, আরে উটেরা সব উটনীদেরই বাচ্চা নয় কি? (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৯৮।

    *একবার এক বৃদ্ধা রাসুল (সা.)-এর দরবারে এসে নিবেদন করলো, ‘আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করুন, যেনো আমি জান্নাতে যেতে পারি।’রাসুল (সা.) বললেন-‘জান্নাতে তো কোনো বৃদ্ধা যাবে না!’ এ কথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে লাগলো। রাসুল (সা.) সাহাবাদের ডেকে বললেন-‘তাকে জানিয়ে দাও, বৃদ্ধাবস্থায় সে জান্নাতে যাবে না; (বরং যুবতী হয়ে যাবে)। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন- আমি জান্নাতি নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। আর তাদের করেছি চির কুমারী।’ (সুরা ওয়াকিয়া : ৩৫-৩৬; শামায়েলে তিরমিজি : ১৬; হায়াতুস সাহাবা : ২/৫৭৩)।

    *একদিন জামাই শ্বশুর মানে নবী (সা.) ও আলী (রা.) এক সাথে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। নবী (সা.) খেজুর খেয়ে আটিগুলো আলী (রা.) যেখানে আটি রাখছিলেন সেখানে রাখছেন। একপর্যায়ে রসিকতা করে নবী (সা.) বললেন, আলী তোমার দেখছি খুব খিদে পেয়েছে! তোমার পাশে দেখছো তো অনেক খেজুরের আটি! জামাইও ছাড়ার পাত্র নয়। নবী (সা.)-কে লক্ষ্য করে আলী (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চেয়ে দেখছি আপনার অনেক বেশি খিদে পেয়েছে! কারণ আমি তো আটি ফেলে দিচ্ছি কিন্তু আপনি তো আটি সমেত খেজুর খেয়ে ফেলছেন। এ কথার পর জামাই শ্বশুর সমস্বরে হো হো করে হেসে উঠলেন। এরকম আরো অনেক রশিকতাই রাসুল করেছেন, যা সুস্থ সংস্কৃতির বহি:প্রকাশ।

    মহানবীর বাচনভঙ্গী:

    সুন্দরভাবে কথা বলা এক ধরনের আর্ট এবং সুস্থ সংস্কৃতির অঙ্গ। থাবার্তা ও আলাপচারিতায় মানুষের ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে ওঠে। তার শিক্ষা ও শিষ্টাচার, রুচি ও ব্যক্তিবোধ, মন ও চিত্ত-মানসিকতা স্পষ্ট হয়। যুতসই শব্দচয়ন, বিশুদ্ধ উচ্চারণ, মিষ্টি ভঙ্গি ও বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা একজন মানুষকে অনন্য গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয় সবার মাঝে। এটি সুস্থ সংস্কৃতির একটি বড় উপাদান। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) তার জীবন ও আদর্শের মাধ্যমে আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।

    হাসিমুখে কথা বলা

    হাসিমুখে কথা বলা সংস্কৃতির অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় হাসিমুখে কথা বলতেন। তিনি কখনও মুখ কালো করে থাকতেন না।এমনকি ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ-ব্যথাগুলো তার কথা ও আচরণে প্রকাশ পেতো না। আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা অধিক মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখি নি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭৭৪০)

    বিশুদ্ধ ভাষার ব্যবহার

    রাসুলুল্লাহ(সা.)সবসময় বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও আলংকারিক ভাষার কৃতিত্বধারী। তার শব্দ ও বাক্য, উচ্চারণ ও ভঙ্গিমা সবকিছুই ছিলো-বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ; বরং বলা যায় সাহিত্যের উত্তম নিদর্শন। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.)ছিলেন আরবের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষী।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস: ৩৫৪৭১)

    রাসুলুল্লাহ(সা.)কথা বলার সময় যেমন তাড়াহুড়া করতেন না, তেমনি এতো ধীরে বলতেন না যাতে কথার ছন্দপতন হয়। বরং প্রতিটি কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমাদের মতো এক নাগাড়ে তাড়াহুড়া করে কথা বলতেন না; বরং তিনি প্রতিটি কথা পৃথক পৃথক স্পষ্ট ভাষায় বলতেন। যাতে তার পাশে উপবিষ্ট ব্যক্তিরা তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৬৩৯)

    সংগীত:

    *ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তার এক আত্মীয়ের এক আনসার মেয়ের সাথে বিবাহ দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেনঃ তোমরা কি মেয়েটিকে স্বামীর বাড়ি) পাঠিয়ে দিয়েছ? তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমরা কি তার সাথে এমন কাউকে পাঠিয়েছ, যে গান গাইতে পারে? আয়িশাহ্‌ (রাঃ)বলেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আনসার সম্প্রদায় গানের ভক্ত। অতএব তোমরা যদি তার সাথে কাউকে পাঠাতে, যে গিয়ে এরূপ বলতোঃ “আমরা এসেছি তোমাদের কাছে, আমরা এসেছি তোমাদের কাছে, আল্লাহ আমাদের দীর্ঘজীবী করুন এবং দীর্ঘজীবী করুন তোমাদের [ইবনে মাযাহ ১৯০০]

    খেলাধুলা ও বিনোদনের  কিছু নমুনা:

    রাসুল স. এর জবানীতে ও তার কর্মকাণ্ড হতে আমরা খেলাধুলার মতো সুস্থ সংস্কৃতির লালন প্রত্যক্ষ করি। যেমন:

    হাটা ও দৌড়ানো প্রতিযোগিতা:

    শরীয়তের বিধান মেনে স্ত্রীর সাথে বিনোদনমূলক খেলাধুলা সুন্নত। রাসুল সা. আম্মাজান আয়েশা রা. এর দৌড় খেলায় অংশ নিয়েছেন।

    উবায়দুল্লাহ ও আব্দুল্লাহসহ আব্বাসের ছেলেদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ “যে আমার কাছে আগে আসতে পারবে তাকে এত এত দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ: ১/২১৪) এভাবে তার প্রতিযোগিতা করতেন।

     

    খেলা দেখা:

    নবী সা: আয়েশা রা: কেও খেলা দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ আল্লাহর শপথ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার কক্ষের দরওয়াজায় দাড়ানো দেখেছি, যখন আবিসিনিয়ার লোকগণ আল্লাহর রাসূলের মাসজিদে তাদের যুদ্ধের অস্ত্র নিয়ে খেলছিল। তিনি আমাকে তার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখছিলেন যাতে আমি তাদের দিকে তাকাতে পারি। তারপর আমার জন্য অবস্থান করতেই থাকতেন যতক্ষন না আমি নিজে থেকে ফিরে যেতে না চাইতাম।(মুসলিম:৮৯২)

    তাদের এ নৃত্য রাসূল সা: আয়েশা রা:কে দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, নিজেও দেখছিলেন এবং তাদেরকে উৎসাহিত করেছিলেন।

    কুস্তি প্রতিযোগিতা:

    রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রোকানাকে ধরাশায়ী করেছিলেন।(সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল লিবাস)

    পুতুল খেলা:

    আয়েশা দাম্পত্যের প্রথম জীবনে নবী (সঃ) এর সামনে খেলা করতেন।

    আয়েশা(রা.) বলেন: “আমি আল্লাহর রাসুলের উপস্থিতিতে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলত।যখন আল্লাহর রাসুল (আলাইহিছ ছালাম) বাড়ীতে প্রবেশ করতেন, তখন ওরা পুতুলগুলো লুকিয়ে নিত। কিন্তু তিনি (সঃ) তাদেরকে আমার সাথে একত্রে খেলতে বলতেন।”(সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৩০ ; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৪৪০ )

    আয়েশা(রা.) আরো বলেন: “একবার রাছূলুল্লাহ আলাইহিছ ছালাম আয়েশার ঘরের পর্দা উন্মোচন করে খেলনা দেখে বললেন, এগুলো কী? তিনি বললেন, এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া ছিল। সেটি দেখে তাকে তিনি(আলাইহিস সালাম) বললেন-"এই খেলনাগুলোর মাঝে এটি কি?" তিনি বললাম,"ঘোড়া", রাছূলুল্লাহ আলাইহিছ ছালাম বললেন-"ঘোড়ার উপর কি?" আমি বললাম-"২ টি ডানা",অতঃপর তিনি বললেন- ঘোড়ার কী পাখা থাকে? আয়েশা রা. করলেন,"আপনি শুনেননি যে, সুলাইমান আলাইহিস সালামের একটি ঘোড়া ছিল যার ২ টি ডানা ছিল?এরপর রাছূলে আকরাম আলাইহিছ ছালাম হাসলেন এমনকি তার চোয়াল দাঁত মুবারক ও দেখা যাচ্ছিল।" (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩)পুতুলের ক্ষেত্রে আকৃতি বুঝা যায় না এমন পুতুল হওয়া চাই।

    শেষ কথা:

    মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ স.পাপ-পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ এ পৃথিবীতে এসে অপসংস্কৃতি মুলৎপাটন করে যে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে কলুষমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন পৃথিবী উপহার দিলেন গোটা বিশ্ববাসী তার জন্য তাকে যুগ যুগ ধরে স্বরণ করবে।‍ 

     

    লেখক:

    কলেজ শিক্ষক; সভাপতি, প্রত্যাশা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ ও বাংলাদেশ সাহিত্য ছাউনি (drazzak77@gmail.com)


    বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির ঢাকা

    বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মুফাচ্ছির

    সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান ঢাকা

    সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় চারুশিল্পীদের এগিয়ে আসার আহ্বান

    দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক শোক সংবাদ

    দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের সহধর্মিণীর মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক

    কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম ঢাকা

    কার্টুন অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যম

    ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ ঢাকা

    ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ কার্টুন প্রদর্শনীর সমাপনী আজ

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত কর্মশালা

    দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের কালচারাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

    বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন বরিশাল

    বরিশাল সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদের মুলাদি উপজেলার প্রতিযোগিতা সম্পন্ন

    যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন কবিতা পাঠ আসর

    যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সিরাতুন্নবী সা. উদযাপন

    ভাষা সৈনিক সাংবাদিক আবদুল গফুরের মৃত্যুতে দেশীয়র শোক শোক সংবাদ

    ভাষা সৈনিক সাংবাদিক আবদুল গফুরের মৃত্যুতে দেশীয়র শোক

    সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের শোক শোক সংবাদ

    সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের শোক

    আসছে গাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘আমার মা’ প্রকাশনা

    আসছে গাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘আমার মা’

    মুখোমুখি কবি আসাদ বিন হাফিজ সাক্ষাৎকার

    মুখোমুখি কবি আসাদ বিন হাফিজ

    মানিকগঞ্জ সাংস্কৃতিক সংসদের পথ চলা শুরু ঢাকা

    মানিকগঞ্জ সাংস্কৃতিক সংসদের পথ চলা শুরু

    ফিলিস্তিনি 'কবিতা বারুদ' জ্বালালো কবিতা বাংলাদেশ অনুষ্ঠান

    ফিলিস্তিনি 'কবিতা বারুদ' জ্বালালো কবিতা বাংলাদেশ

    প্রকাশিত হলো শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের ‘ইসলামে চলচ্চিত্র ও নাটক’ বইমেলা

    প্রকাশিত হলো শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের ‘ইসলামে চলচ্চিত্র ও নাটক’

    শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক ছড়া-কবিতা লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন দিবস পালন

    শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক ছড়া-কবিতা লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন

     শিল্পী রাকিবুল হাসানের মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক শোক সংবাদ

    শিল্পী রাকিবুল হাসানের মৃত্যুতে দেশীয়’র শোক

    সাক্ষাৎকারমূলক জীবনীগ্রন্থ ‘আলাপে সংলাপে’ এর মোড়ক উম্মোচন খুলনা

    সাক্ষাৎকারমূলক জীবনীগ্রন্থ ‘আলাপে সংলাপে’ এর মোড়ক উম্মোচন

    সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় ১০ ইসলামী গান গান

    সর্বাধিক দর্শকপ্রিয় ১০ ইসলামী গান

    সীরাতুন্নবী (সা:) উদযাপন উপলক্ষে নোসাসের  সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৩ অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতা

    সীরাতুন্নবী (সা:) উদযাপন উপলক্ষে নোসাসের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৩ অনুষ্ঠিত